নিগ্রহের প্রতিবাদ, ইস্তফা দিতে চান ডাক্তাররা

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রতিবাদে আজ, শনিবার সরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ গণ-ইস্তফা দেবেন। চিকিৎসকদের সংগঠন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ ইতিমধ্যে ফেসবুকে ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক ১৭ জন চিকিৎসকের নামের তালিকাও দিয়েছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

গত এক বছরে রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৮৫ জন চিকিৎসক কর্মরত অবস্থায় মার খেয়েছেন। হামলাকারীরা কখনও রোগীর আত্মীয়, কখনও বহিরাগত। চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন একসঙ্গে বসে এই তথ্য সংগ্রহ করেছে। এবং তারা জানিয়েছে, ক্রমাগত এই হামলায় চিকিৎসকেরা ক্ষুব্ধ, আতঙ্কিত এবং বীতশ্রদ্ধ। এ বার তাঁরা কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন।

Advertisement

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, প্রতিবাদে আজ, শনিবার সরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ গণ-ইস্তফা দেবেন। চিকিৎসকদের সংগঠন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ ইতিমধ্যে ফেসবুকে ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক ১৭ জন চিকিৎসকের নামের তালিকাও দিয়েছেন।

সংগঠনের সভাপতি, চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েও লাভ হয়নি। ডাক্তাররা এ বার যে পথ নেবেন, তাতে সরকার অস্বস্তিতে পড়বে।’’ সেটা গণ-ইস্তফা কি না, জিজ্ঞাসা করায় রেজাউলের উত্তর, ‘‘হতে পারে। ফেসবুকে ইতিমধ্যে অনেকেই ইস্তফা দেওয়ার কথা খোলাখুলি জানিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শনিবার চিকিৎসকদের ৭টি সংগঠন মিলে বৈঠকের পর ঘোষণা হবে।’’ যদি কোনও ভাবে গণ-ইস্তফা না হয়, তা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ করা বা অনশনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন রেজাউল। তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা এই ভাবে পড়ে-পড়ে মার খেতে পারেন না।’’

Advertisement

গত তিন বছরে শুধু নদিয়া-মুর্শিদাবাদ থেকে ৭ জন সরকারি চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছিলেন। বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কামারহাটি, হাবড়া, ডেবরা, রানাঘাট, বর্ধমানের মতো বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনায় তাঁদের এ রাজ্যে কাজের ইচ্ছা ক্রমশ কমছিল। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় ৫ মার্চ মথুরাপুরের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর পরিজনদের হাতে কৃষ্ণা বর্মন নামে এক চিকিৎসক নিগৃহীত হওয়ায়। যা দেখে চিকিৎসক মহল স্তম্ভিত!

রেজাউলের কথায়, ‘‘চুলের মুঠি ধরে ওঁর মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়েছে।’’ ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে থাকলে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকেরা কাজ করতে রাজি হবেন না। তাঁরা আতঙ্কিত। আমি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-সহ সব কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওঁরা ভেঙে প়ড়েছেন।’’ চিকিৎসকদের অন্য একটি সংগঠন ‘ডোপা’র তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায়-ও বলেন, ‘‘ন্যক্কারজনক ঘটনা। নিন্দার ভাষা নেই। চিকিৎসকেরা এমন প্রতিবাদের পথে যাবেন যে সকলে চমকে উঠবে।’’

শুক্রবার সারা দিনই ফেসবুকে চিকিৎসকদের বিভিন্ন গ্রুপে হামলার প্রতিবাদে গণ-ইস্তফা দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। একের পর এক চিকিৎসক প্রকাশ্যে নিজেদের ফোন নম্বর পোস্ট করে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বেশিরভাগ চিকিৎসক তাঁদের পোস্টে মত দিয়েছেন— বিক্ষিপ্ত ভাবে ইস্তফা দিয়ে সরকারের টনক নাড়ানো যাবে না। একমাত্র গণ-ইস্তফা দিলে তবেই সরকার চিকিৎসকদের কদর বুঝবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন