মুর্শিদাবাদে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বিএলও-র। —প্রতীকী চিত্র।
মুর্শিদাবাদে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-এর। বৃহস্পতিবার রাতে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ করার সময়ে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকির হোসেন নামের ওই বিএলও। রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। জাকিরের পরিবারের অভিযোগ, অতিরিক্ত কাজের চাপেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
জাকিরের বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে। খড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের ঝিল্লি গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘা এলাকায় ১৪ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জাকির। তাঁর পরিবারের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব এনুমারেশন ফর্ম জমা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তিনি। সেই চিন্তায় রাত জেগে ফর্ম আপলোড করার কাজ করতেন। প্রায় প্রতি দিন রাত জেগে কাজ করার জন্য তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “প্রত্যেক দিন সকালে এসআইআর-এর কাজ করতে বেরোতেন জাকির। আবার গভীর রাত পর্যন্ত এনুমারেশন ফর্ম সার্ভারে আপলোড করতেন। সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। স্থানীয়দের বলতেন, এই কাজ ওঁর জন্য নয়।”
এই ঘটনা প্রসঙ্গে খড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিস মার্জিত বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কমিশনকে কাজে লাগিয়ে এসআইআর চালু করেছে। তার জন্য এই রকম ভদ্র, শিক্ষিত ব্যক্তিরা অকালে ঝরে যাচ্ছেন। জাকির আমার সহকর্মী ছিলেন। তাই আমি তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।”
রাজ্যে একের পর এক বিএলও-র মৃত্যু কিংবা আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। গত শনিবার নদিয়ার চাপড়ায় বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিএলও রিঙ্কু তরফদারের ঝুলন্ত দেহ। তাঁর দেহের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, “আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী।” এই ঘটনার কিছু দিন আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু হয় বিএলও নমিতা হাঁসদার। মেমারির চক বলরামপুরে ২৭৮ নম্বর বুথের বিএলও ছিলেন তিনি। অসুস্থ নমিতাকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তাঁর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, অত্যধিক কাজের চাপেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে লপাইগুড়ির মাল ব্লকের নিউ গ্লেনকো চা বাগান এলাকায় শান্তিমুনি ওঁরাও নামের এক বিএলও-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সে ক্ষেত্রেও অভিযোগ ওঠে যে, কাজের চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই তরুণী।