কন্যাশ্রীর সুযোগ চেয়ে প্রতিবন্ধীর চিঠি মমতাকে

তিনি ভাল ভাবে হাঁটতে পারেন না। মানসিক ভাবেও কিছুটা অসুস্থ। তবু অশক্ত শরীরটাকে প্রতিদিন টেনে নিয়ে যান স্কুলে। দু’চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাদ সাধছে অনটন। বাবা অসিত মাইতি বেতের ঝুড়ি বানিয়ে কোনও মতে সংসার চালান।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

একরাশ অন্ধকারের মধ্যে তিনি ‘কন্যাশ্রী’র আলো চান। কিন্তু উপায় নেই! তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন হাওড়ার এক প্রতিবন্ধী ছাত্রী।

Advertisement

তিনি ভাল ভাবে হাঁটতে পারেন না। মানসিক ভাবেও কিছুটা অসুস্থ। তবু অশক্ত শরীরটাকে প্রতিদিন টেনে নিয়ে যান স্কুলে। দু’চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাদ সাধছে অনটন। বাবা অসিত মাইতি বেতের ঝুড়ি বানিয়ে কোনও মতে সংসার চালান। পাশে কেউ নেই। নেই ‘কন্যাশ্রী’তে নাম তোলার সুযোগও। হাওড়ার বাগনানের ভুঁঞেড়া বিএনএস হাইস্কুলের দশম শ্রেণির স্বপ্না মাইতির বয়স যে এখন ২২!

স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনে সাড়া মেলেনি। প্রশাসনও নিরুত্তর। কোনও উপায় না-পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্বপ্নার মরিয়া আবেদন, ‘প্রতিবন্ধকতার জন্য যারা দেরিতে পড়াশোনা শুরু করতে বাধ্য হয়েছে, তাদেরও কন্যাশ্রীর আওতায় আনা হোক। প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার জীবন আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়। বয়স বেশি হওয়ায় আমি কন্যাশ্রী থেকে বঞ্চিত।’’

Advertisement

সম্প্রতি ওই আবেদন সংবলিত চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠান স্বপ্না। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে একজন মহিলা। তাঁর উদ্যোগেই কন্যাশ্রী প্রকল্প আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী সমস্যার সমাধান করবেনই। না হলে আমি আর পড়তে পারব না।’’

কয়েক মাস আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের এক প্রতিযোগিতায় সেরার সেরা শিরোপা পায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’। যে ৪০ লক্ষ কন্যা এই প্রকল্পের সুবিধা পায়, মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কারটি তাদেরই উৎসর্গ করেন। কিন্তু সেই কন্যাদের তালিকায় নেই স্বপ্না এবং তাঁর মতো অনেক প্রতিবন্ধীই।

অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পর সেই সব ছাত্রীই কন্যাশ্রীর আওতায় আসে, যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম। ছাত্রীর সর্বোচ্চ বয়সসীমা হতে হবে ১৮ বছর। নিয়মমতো তখন থেকে ছাত্রীটিকে ওই প্রকল্পে বছরে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলে ২৫ হাজার টাকা পায়। কিন্তু বহু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী পড়াশোনা শুরুই করে দেরিতে। ফলে, অধিকাংশই অষ্টম শ্রেণিতে যখন ওঠেন, তখন তাঁদের বয়স ১৮ বছর পেরিয়ে যায়। ফলে, তাঁরা কন্যাশ্রীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। যেমনটা হয়েছে স্বপ্নার।

স্বপ্নার স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিঞ্জল সেনগুপ্ত গত ৩০ জুন বিডিও-র কাছে তাঁর হয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। বিডিও জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। কিন্তু কিছুই হয়নি। বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সান্ত্বনা সাউ বলেন, ‘‘অনেক প্রতিবন্ধী ছাত্রী এই সমস্যায় ভুগছেন। তাঁরা এসে কান্নাকাটি করলেও আমাদের কিছু করার নেই।’’

‘রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী’র সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও জানান, প্রতিবন্ধীদের অনেকেই স্বাভাবিক ছাত্রছাত্রীদের থেকে চার-পাঁচ বছর দেরিতে পড়াশোনা শুরু করে। প্রতিবন্ধী ছাত্রীদের ওই প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য বহুবার সরকারের কাছে আবেদন জানানো হলেও কিছু হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। কান্তিবাবু বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীরা তো চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের ছাড় পান। কন্যাশ্রী প্রকল্পে অন্তত পাঁচ বছর বয়সের ছাড় দিলে ক্ষতি কী?’’

কী বলছে সরকার?

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, স্বপ্নার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। তার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করা যায় কিনা, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভাবনাচিন্তা করছেন।’’

অপেক্ষায় রয়েছেন স্বপ্না এবং তাঁর মতো আরও অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন