ভিক্ষা নয় স্কুল, দিন বদলে পথে নেমেছেন ইঞ্জিনিয়ার

কাঁধে জাতীয় পতাকা। আইআইটির শহরের বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাফেরা করছেন এক যুবক। তাঁকে দেখে জুটে গেল কিছু শিশু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

প্রচার: শিশুদের সঙ্গে আশিস। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

কাঁধে জাতীয় পতাকা। আইআইটির শহরের বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাফেরা করছেন এক যুবক। তাঁকে দেখে জুটে গেল কিছু শিশু। তাদের অনেকেই স্কুল ছেড়ে ভিক্ষায়, অনেকে বুঁদ নেশায়। ম্যাজিক দেখানোর কথা বলে যুবক মিশে গেলেন শিশুদের সঙ্গে। বললেন, ‘‘৬ লক্ষ টাকার চাকরি ছেড়ে ১০ হাজার কিলোমিটার হেঁটেছি। ৫ জোড়া জুতো বদলেছি। সব তোমাদের জন্য। আর তোমরা ‘মুক্ত ভারত’ গড়ার জন্য শুধু ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্কুলে যেতে পারবে না!”

Advertisement

মঙ্গলবার, গাঁধী জয়ন্তীর দিন খ়ড়্গপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বস্তিতে যেন আক্ষরিক অর্থে এক জাদু প্রদর্শনী হচ্ছিল। সব দেখে-শুনে স্কুলছুট শেখ আশিস, শেখ আজিম বলল, “মাস্টারমশাইরা মারে, তাই স্কুলে যাই না। টাকার জন্য ভিক্ষা করি। তবে এই স্যর বলেছে স্কুলে গেলে জাদু হবে। আমরা স্কুলে যাব।”

জাদুকরের নাম আশিস শর্মা। দিল্লির সময়পুর বাদলির বাসিন্দা বছর উনত্রিশের ওই যুবক পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ভিক্ষা করে দিন গুজরান করা শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে হাঁটছেন আশিস। সাইকেল, বাইকে নয়। রীতিমতো পায়ে হেঁটে পৌঁছে যাচ্ছেন স্কুলছুটদের কাছে। লক্ষ্য একটাই। গড়তে হবে ‘মুক্ত ভারত’। এক বছর সোনীপতে একটি সংস্থায় বার্ষিক ৬ লক্ষ টাকার চাকরি করার পর আর মন টেকেনি আশিসের। ২০১৭-র ২৪ অগস্ট জম্মুর উধমপুর থেকে শুরু করেন অভিযান। নিজের সামনেই লক্ষ্য রেখেছেন তিনি— পাড়ি দিতে হবে ১৭ হাজার কিলোমিটার। হিমাচল, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গোয়া, দমন, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর-সহ ২২টি রাজ্যে ঘুরেছেন। এ বার এসেছেন এই রাজ্যে।

Advertisement

মাস খানেক ধরে দার্জিলিং, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ঘুরে পৌঁছেছেন খড়্গপুরে। আশিসের কথায়, ‘‘আমরা ভিক্ষা দিই বলে এই খুদেরা ভিক্ষা করে। আমাদের উচিত, এদের মূল স্রোতে ফেরানো। গুগলে কর্মরত আমার দুই বন্ধুকে দিয়ে অ্যাপ তৈরি করাচ্ছি। ওই অ্যাপে সাধারণ মানুষ নিজের এলাকায় থাকা স্কুলছুটদের ছবি আপলোড করবে। ছবি পৌঁছে যাবে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”

আশিসের বাবা সুরেশ শর্মা একটি সংস্থার ডেপুটি ম্যানেজার। ভাই হিমাংশু শর্মা দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবী। ২০১৬-য় চাকরি ছাড়েন আশিস। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরি করার সময়ে ৯ শিশুকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। বুঝেছিলাম একার পক্ষে বড়জোড় ৬০-৭০জন শিশুকে মূল স্রোতে ফেরানো সম্ভব। তাই ‘মুক্ত ভারত’ গড়ার পরিকল্পনা। এ টুকু বলতে পারি বদল আসছে।” শেখ আশিস, শেখ আজিমরা ফের স্কুলে গেলেই স্বপ্ন সফল হবে আশিস স্যরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন