দরজা ভেঙে মুখটা দেখে চমকে গেলাম

মাঠে কাজ করতে করতে বিকট শব্দটা কানে এসেছিল শেখ শাহিদের। দেখলেন, একটা ইনোভা রাস্তার ধারের রেলিংগুলি ভাঙতে ভাঙতে সেতুতে ধাক্কা মেরে আছড়ে পড়ল নয়ানজুলিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুড়াপ ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০৪:২০
Share:

সুরান্ত: সোমবার বাগুইআটিতে শেষ অনুষ্ঠানে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

মাঠে কাজ করতে করতে বিকট শব্দটা কানে এসেছিল শেখ শাহিদের। দেখলেন, একটা ইনোভা রাস্তার ধারের রেলিংগুলি ভাঙতে ভাঙতে সেতুতে ধাক্কা মেরে আছড়ে পড়ল নয়ানজুলিতে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল ৯টা। ঘটনাস্থল হুগলির গুড়াপে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে। তত ক্ষণে সেখানে ভিড় জমেছে। গাড়ি উল্টে রয়েছে জলে। ছাদ নীচে, চাকা উপরে। দরজা খোলার মরিয়া চেষ্টা করছেন যাত্রীরা।

শাহিদ বললেন, ‘‘শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ছ’জনকে বের করি। চালকের পাশের যাত্রীকে দেখেই চমকে যাই। কালিকাপ্রসাদের গান তো টিভিতে কত শুনেছি!’’ অ্যাম্বুল্যান্সে সবাইকে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যালে। কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘হাসপাতালে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।’’

Advertisement

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মাথার আঘাতেই এই মৃত্যু। তাঁর সঙ্গী সন্দীপন পাল ও প্রদীপ্ত চক্রবর্তী শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট পেয়েছেন। তাঁরা বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে চিকিৎসাধীন। চালক অর্ণব রাও ও আর এক যাত্রী নীলাদ্রি রায় বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। গাড়ির আর এক আরোহী রাজীব দাস বিকেলে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সকাল সাতটায় বেরিয়েছিলাম সিউড়িতে অনুষ্ঠান করতে। আমি ও নীলাদ্রি বসেছিলাম মাঝে। পিছনে সন্দীপন, প্রদীপ্ত। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সবাই। হঠাৎ প্রচণ্ড ধাক্কা।’’ তিনি বলেন, ‘‘কালিকাদার অবস্থা সব থেকে খারাপ ছিল। সারাটা রাস্তা বুকে পাম্প করতে করতে গিয়েছি। কিন্তু ডাক্তাররা জানালেন, সব শেষ।’’

দুর্ঘটনা: নয়ানজুলিতে সেই গাড়িটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। কয়েকটি রেলিং ভেঙে গার্ডওয়ালের লোহার পাতের উপর দিয়ে ঘষটে অন্তত ৯০ মিটার এগিয়ে যায় গাড়িটি। শেষে নয়ানজুলির সেতুর বাঁ-দিকে ফের ধাক্কা মারে। তাতে সেতুর কংক্রিটের পাঁচিল ভেঙে যায়। এর পরেই চালকের দিকের সামনের চাকা খুলে সেতুর উপর থেকে ১৫ ফুট নীচে আছড়ে পড়ে গাড়ি। হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জেনেছি গাড়িটির গতি খুব বেশি ছিল। একটি চাকা খুলে যাওয়াতেই সেটি পাল্টি খেয়ে নয়ানজুলিতে পড়ে।”

আরও পড়ুন: কালিকাদা ছিল আশার সূর্য, সবার কথা ভাবত

যদিও পুলিশের বক্তব্য, কোনও গাড়ি ধাক্কা মারেনি। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাঁ দিকে চলে যান। লোহার গার্ডরেলে ঘষটে আর সেতুতে ধাক্কা খেয়েই চাকা খুলে গিয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন