নজরে বর্ধমান

চাকরি আছে নথিতে, তবু তিনি বেকার

দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই দেখা যায় তাঁকে। কখনও চেয়ারে বসে গোয়েন্দা গল্প পড়েন, কখনও বাড়ির আশপাশে পায়চারি করেন। অথচ সরকারি খাতায় তাঁর পরিচয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১০
Share:

দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতেই দেখা যায় তাঁকে। কখনও চেয়ারে বসে গোয়েন্দা গল্প পড়েন, কখনও বাড়ির আশপাশে পায়চারি করেন। অথচ সরকারি খাতায় তাঁর পরিচয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বায়ুসেনার প্রাক্তন কর্মী, কালনার আস্তিককুমার ঘোষের দাবি, তাঁর নাম ভাঙিয়ে অন্য কেউ বছরের পর বছর চাকরি করছে। ১৬ বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন দফতরে ‘সত্যি’টা জানিয়ে ব্যর্থ আবেদন করে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

৫৯ বছরের আস্তিকবাবুর দাবি, ১৯৯১ সালের ৩১ মার্চ বায়ুসেনা থেকে অবসর নেওয়ার পরে জেলা সৈনিক বোর্ড ও কালনা কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করান। ১৯৯৩ সালে প্রাথমিক স্কুলে চাকরির জন্য জেলা পরিষদে ইন্টারভিউ দেন। ২০০০ সালে রেজিস্ট্রেশন নবীকরণ করাতে গিয়ে মাথায় হাত পড়ে তাঁর। কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র জানায়, তিনি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তবে কোথায়, কোন স্কুলে তা জানানো হয়নি বলে তাঁর দাবি। আস্তিকবাবু কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র ও জেলা সৈনিক বোর্ডে চিঠি দিয়ে জানান, তিনি কোনও চাকরিতে যোগ দেননি। জেলা সৈনিক বোর্ড কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়ে আসল ঘটনা জানতে চায়। তখন জানানো হয়, ১৯৯৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি যে ১৫ জন প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছেন, সেই তালিকায় ৯ নম্বরে নাম রয়েছে আস্তিককুমার ঘোষের। তাই রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গিয়েছে।

এর পরে প্রতারণার অভিযোগ ও চাকরির আবেদন করে জেলা স্কুল পরিদর্শক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান, ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক গ্রিভান্স, রাজ্য সৈনিক বোর্ড, রাজ্যপাল, রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান তিনি। লাভ হয়নি। অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেন। নভেম্বরে তথ্য জানার আইনে বিশদ জানতে চেয়ে আবেদন করেছেন।

Advertisement

কালনার বারুইপাড়ায় আস্তিকবাবুর বাড়িতে এখন ফাইলবন্দি অজস্র আবেদন। অনেকগুলিরই জবাবে জানানো হয়েছে, তিনি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। আস্তিকবাবু জানান, সমস্যা জেনে কালনা কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র কয়েক বার রেজিস্ট্রেশন নবীকরণের সুযোগ দেয়। ২০০৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সময়েও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের তালিকায় উপরের দিকেই নাম ছিল। কিন্তু সব আশা শেষ করে দেয় ২৭ জুলাই ওই কেন্দ্রের পাঠানো চিঠি। তাতে ফের জানানো হয়, ১৯৯৬ সালেই তাঁর নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। আস্তিকবাবুর আক্ষেপ, ‘‘আমার নাম-ঠিকানা দিয়ে এত বছর অন্য কেউ জালিয়াতি করে কাজ করে গেল। অথচ এত দোরে মাথা ঠুকেও এর কোনও বিহিত হল না!’’ স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। ছেলে অনির্বাণ বলেন, ‘‘অদ্ভুত ব্যাপার। একটা মানুষ বাড়িতে বসে। অথচ সরকারি খাতায় তিনি প্রাথমিক শিক্ষক!’’

চাকরির আশা আর করেন না আস্তিকবাবু। শুধু চান সত্যিটা প্রকাশ পাক। কালনা কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরনো বিষয়। আমার জানা নেই। তবে চাকরি পাওয়ার পরে হয় দফতর কিংবা প্রার্থী আমাদের জানিয়ে দেন। তার প্রেক্ষিতে রেজিস্টেশন বাতিল করা হয়।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান অচিন্ত্য চক্রবর্তীর আশ্বাস, ‘‘উনি সহ কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে আসুন। ওঁর কাছে সব শুনে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন