এটিএমে টাকা এল, হোয়াটসঅ্যাপে ডাক

রাত সাড়ে দশটা। অন্য সময় এখন সুনসান থাকে মালবাজারের রাস্তা। কিন্তু নোটের গেরোয় সারা ভারতের মতোই ঘুম নেই ডুয়ার্সের চা-বাগান ঘেরা মালবাজার শহরের।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০৯
Share:

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এটিএমের হদিস। —নিজস্ব চিত্র।

রাত সাড়ে দশটা। অন্য সময় এখন সুনসান থাকে মালবাজারের রাস্তা। কিন্তু নোটের গেরোয় সারা ভারতের মতোই ঘুম নেই ডুয়ার্সের চা-বাগান ঘেরা মালবাজার শহরের।

Advertisement

সুভাষ মোড়ের এসবিআই এটিএমের সামনে দাঁড়িয়ে কৌশিক দেবনাথ। বেসরকারি পণ্য পরিবহণ সংস্থার কর্মী কৌশিকের সামনে তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে জনা ষাটেক বাসিন্দা। লাইন আগে শেষ হবে, নাকি মেশিনের টাকাই ফুরিয়ে যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় সকলে। ঠিক তখনই হোয়াটসঅ্যাপে কৌশিক জানতে পারলেন, ৮ কিলোমিটার দূরে ডামডিমে সেনা ছাউনি লাগোয়া এটিএমে সদ্য টাকা ভরা হল। সেখানে লাইনে মাত্র তিন জন। মোটরবাইকে ১০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে গেলেন কৌশিক। আর পরের পাঁচ মিনিটেই তুলে নিলেন টাকা।

টাকা নেই, টাকা নেই— হাহাকার থেকে বাঁচতে এমন সহায়তার বাঁধনেই এখন নিজেদের বাঁধছে ডুয়ার্স। শিকল হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো শহরে ইতিমধ্যেই টাকা তুলতে এটিএমের সন্ধান দিচ্ছে নানা অ্যাপ ও সাইট। গুগল ইন্ডিয়ার হোমপেজেও গুগুলের লোগোর তলায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে লিঙ্ক, ‘ফাইন্ড এন এটিএম নিয়ার ইউ।’ কিন্তু, পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা ডুয়ার্সে কী আর সেই অ্যাপ কাজ করে? সে কথা জানেনই বা ক’জন! কিন্তু, তাঁরা যেটা জানেন, তা হল উদ্বেগের সময় এক হয়ে দাঁড়াতে হয়।

Advertisement

এই কথাটাই বলছিলেন কৌশিকবাবু। ডিসেম্বরের গোড়াতেই তাঁর বিয়ে। দিনের বেলায় চাকরি, আর রাত জেগে এটিএমে লাইন। এটাই এখন তাঁর রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ‘স্পট ইয়োর এটিএম’ নামে এই গ্রুপের সদস্য হওয়ার সৌজন্যে চাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে তাঁর। গ্রুপের আর এক সদস্য নিশান ঘোষের মালবাজারে ঘড়ির দোকান।
দোকানের পাশের এটিএমে টাকা আছে কি নেই, গ্রুপের সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

ডুয়ার্সের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। কিলোমিটারের অঙ্কে এটিএমের দূরত্ব বেশি না হলেও চা-বাগান ঘেরা এলাকায় রাতে খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বেরোন না। ফাঁকা রাস্তায় চিতাবাঘ, হাতি, বাইসনের সাক্ষাৎ হওয়ায় আশঙ্কা। তাই এই গ্রুপগুলিতে যতটা সম্ভব ঠিক তথ্য দিয়ে সকলকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন সদস্যেরা, জানাচ্ছেন নিরুপম সাহা। মঙ্গলবার তিনিই গ্রুপটি তৈরি করেন। ক’দিনেই গ্রুপের সদস্য আড়াইশো ছাড়িয়েছে!

প্রয়োজনের তাগিদে আড্ডার গ্রুপের চরিত্রও বদলে ফেলছেন অনেকে। সন্তু চৌধুরী, দেবায়ন মুখোপাধ্যায়দের মতো মালবাজারের কিছু যুবক নিজেদের পুরনো বন্ধুদের আড্ডার গ্রুপের নাম রেখেছেন ‘ক্যাচ ইয়োর ক্যাশ’। সকলকে রসিকতা না করে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্যের বার্তা দিতে বলা হয়েছে।

এমন উদ্যোগের কথা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেও। ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদ্যুম্ন দাশগুপ্ত সহকর্মীদের নিয়ে এমনই একটি গ্রুপ তৈরিতে লেগে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকেরা প্রত্যন্ত এলাকাতে থাকেন। তথ্য আদানপ্রদানে তাই সবাইকে কাজে লাগাতে চাইছি।’’

মহানগরে ওয়েবসাইটে-অ্যাপে এটিএমের তথ্য এলেও, ডুয়ার্সের মতো প্রত্যন্ত জনপদে হোয়াটসঅ্যাপে মানববন্ধন যে খুবই উপযোগী, স্বীকার করছেন সকলেই। তাই প্রযুক্তির সিঁড়ি বেয়ে শুধু টাকার সঙ্কটে নয়, ভবিষ্যতে যে কোনও সঙ্কটের কথা ভেবে এমন জোট বাঁধতে শুরু করেছে ডুয়ার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন