গলদ শোধরায় না, কালি লাগায়! হতাশ ‘মূর্তিম্যান’

সেগুলি দেখিয়ে এখন আক্ষেপ করেন মধুসূদনবাবু। কারণ, তাঁর কাছে, এখন সবই ‘অর্থহীন’! মধুসূদনবাবুর কথায়, ‘‘এসবে কোনও লাভ নেই। যে কোনওদিন, যে কেউ আমাদের সংস্কৃতি ভেঙে দেবে!’’ খানিক থেমে বলেন, ‘‘আমরা নীরব দর্শকই থেকে যাব!’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

মধুসূদন মাজি। নিজস্ব চিত্র

পথে মূর্তি দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়েন বৃদ্ধ। দেখেন আপাদমস্তক। শরীরের তুলনায় মূর্তির মাথার আকার বড় নয়তো! মূর্তিটি যাঁর, তাঁর নাম, জন্ম এবং মৃত্যুর তারিখ ঠিকঠাক লেখা রয়েছে তো! ত্রুটি দেখলেই রাজ্যপাল, রাজ্যের বিভিন্ন দফতর এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রতিবাদ-পত্র পাঠিয়ে দেন বৃদ্ধ। তাঁর দাবি, সেই অনুযোগে কাজও হয়।

Advertisement

দেশ জুড়ে যখন মূর্তি ভাঙার প্রতিযোগিতা চলেছে, তখন মূর্তির শুদ্ধতা রক্ষায় ব্যস্ত বরাহনগরের বাসিন্দা মধুসূদন মাজি। বুধবার কেওড়াতলা শ্মশান সংলগ্ন পার্কে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে কালি মাখানোর ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যারা মূর্তির ত্রুটি সংশোধন করতে পারে না, তারা কী করে মূর্তিতে কালি লাগায়?’’

আদতে হাওড়ার বাসিন্দা, রেলের প্রাক্তন কর্মী মধুসূদনবাবু এখন থাকেন বরাহনগরের নৈনানপাড়া লেনে। স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনিকে নিয়ে সংসার। হাঁটতে বেরোন সকাল-বিকেল। সেই হাঁটার ফাঁকেই মূর্তিতে নজরদারি। কেন? মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘এই মূর্তিগুলো আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। তাতে ভুল থাকলে ভাল লাগে না। তাই ভুল থাকলে চিঠি লিখে জানানো প্রয়োজন। সেটাই করি।’’

Advertisement

মধুসূদনবাবু জানান, ২০১২ সালে পাড়ার এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে রবীন্দ্রসদনে গিয়েছিলেন। দেখেন, সদনচত্বরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মূর্তি থাকলেও তাতে লেখা নেই যে, মূর্তিটি আদতে কার! বিষয়টি জানিয়ে সদনের তৎকালীন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারকে চিঠি দেন তিনি। দাবি ছিল, রবীন্দ্রনাথের নাম, জন্ম এবং মৃত্যুর তারিখ লিখতে হবে মূর্তির কাঠামোর গায়ে। তাতে কাজ হলেও সমস্যা সমাধান হয়নি। মধুসূদনবাবু বলেন, ‘‘সদন কর্তৃপক্ষ মূর্তির নীচে রবীন্দ্রনাথের নাম, জন্ম এবং মৃত্যু লিখলেও মৃত্যুর তারিখে ভুল ছিল। আবার চিঠি দিই।’’ রবীন্দ্রসদনের বাইরে গ্লোসাইন বোর্ডে সদনের নাম বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজিতে লেখার আর্জিও জানান। পুরনো চিঠির তাড়া খুলে দেখালেন, সেই বছরের মার্চেই তথ্য এবং সংস্কৃতি দফতরের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, তাঁর প্রস্তাবমতো কাজ শীঘ্রই হবে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রবীন্দ্র-মূর্তি, বাবুঘাটের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ময়দান এলাকায় মাতঙ্গিনী হাজরা এবং আকাশবাণী ভবনের সামনে চিত্তরঞ্জন দাশের মূর্তিতেও নাম, জন্ম এবং মৃত্যুর তথ্য লেখার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন মধুসূদনবাবু। প্রস্তাবমতো কাজ করার কথা জানিয়ে এসেছিল সরকারি চিঠি। সেগুলি দেখিয়ে এখন আক্ষেপ করেন মধুসূদনবাবু। কারণ, তাঁর কাছে, এখন সবই ‘অর্থহীন’! মধুসূদনবাবুর কথায়, ‘‘এসবে কোনও লাভ নেই। যে কোনওদিন, যে কেউ আমাদের সংস্কৃতি ভেঙে দেবে!’’ খানিক থেমে বলেন, ‘‘আমরা নীরব দর্শকই থেকে যাব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন