Maoist

Maoist: ১০ বছরেও শেষ হয়নি বিচার, স্বামীর পথ চেয়ে অপেক্ষায় থাকেন রেবতী

ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয় ধৃতির বিরুদ্ধে। কিন্তু বিচার ২০২১ সালেও শেষ হয়নি।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫২
Share:

রেবতী মাহাতো ও নিয়তি মাহাতো

লাল সুরকি বিছোনো রাস্তা শেষে কাদা মাখা উঠোন। গাড়ি অ্যাসবেসটসের চালের বাড়ির সামনে থামতেই আশপাশ থেকে জড়ো হলেন কয়েক জন মহিলা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ সূর্যশেখর মাহাতো বললেন, ‘‘বুল্টি ঘুমোচ্ছে। কয়েক বছর ধরে ওষুধ খেতে হয়। বলেছি, আপনারা আসবেন দেখা করতে।’’

Advertisement

আদিবাসী অধ্যুষিত শালবনির কুমিরকাটা গ্রামের এই বাড়ির ছোট ছেলে ধৃতিরঞ্জনকে ২০১০ সালের মার্চের এক সকালে মেদিনীপুর সদরের রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দিন কয়েক আগেই ঘটেছিল বিনপুরের শিলদার ইএফআর তথা কেন্দ্রীয় জওয়ানদের উপরে মাওবাদীদের হামলা।

ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু হয় ধৃতির বিরুদ্ধে। কিন্তু বিচার ২০২১ সালেও শেষ হয়নি। দোষীও সাব্যস্ত হননি আবার জামিনও পাননি ধৃতিরঞ্জন। বন্দি রয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। দোষ প্রমাণিত না হলেও তিনি ‘মাওবাদী’, নাশকতার ঘটনায় জড়িত— এমনটাই শুনতে হয় ধৃতির স্ত্রী রেবতী ওরফে বুল্টি, বাবা সূর্যশেখর ও মা সুচেতাকে।

Advertisement

প্রতিবেশীরাই জানালেন, বিয়ের মাস তিনেকের মধ্যেই গ্রেফতার হন ধৃতি। মেদিনীপুরের জেলে থাকাকালীন ধৃতির সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন করে দেখা করার সুযোগ হত বুল্টির। ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ তাঁকে ঘিরে ধরে। পুত্রবধূর চিকিৎসা শুরু করান সূর্যশেখর।

পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যেই বাড়ির দাওয়ায় পাতা চৌকিতে এসে বসেন বুল্টি। আস্তে আস্তে বলেন, ‘‘আমার স্বামী গাড়ি চালাতেন। বন বিভাগের অফিসে গিয়েছিলেন তেল আনতে। রাস্তা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল। প্রথম কয়েক দিন স্বামীর খোঁজও পাইনি।’’ মাহাতো পরিবারের দাবি, ধৃতিরঞ্জনকে গ্রেফতারের ১৮ দিন পরে তাঁকে শিলদা মামলায় যুক্ত করে পুলিশ। পুরনো ঘটনা নিয়ে বলতে বলতেই বছর ছাব্বিশের তরুণীর চোখ জলে ভরে যায়। বলেন, ‘‘জামিন না হয় দিল না। বিচারও কি শেষ হবে না? ১০ বছর তো হয়ে গেল।’’ ঘরের দাওয়ায় পৌঁছনো মহিলারাও বুল্টির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘মেয়েটা তো বিয়ে, সংসার কিছুই বুঝতে পারল না। স্বামীকে ছাড়াই এত বছর শ্বশুরবাড়িতে পড়ে রয়েছে। ছেলেটারও তো মানসিক সমস্যা শুনেছি।’’

ধৃতিরঞ্জনের মতো জঙ্গলমহলের ৫০ জন বাসিন্দা ইউএপিএ ধারায় বিচারাধীন। তাদের পরিবারের একটাই আবেদন— দ্রুত বিচার শেষ হোক। হয় মুক্তি মিলুক না হয় অন্তত জেলা থেকে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হোক। যেমন বেলপাহাড়ির নিয়তি মাহাতো। শিলদার ঘটনার পরে একমাত্র ছেলে বুদ্ধদেবকে রাত্রিবেলা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। মায়ের প্রশ্ন, ‘‘আমার ছেলের নাম তো বুদ্ধদেব। পুলিশ এসে বলল, ওর নাম বুদ্ধেশ্বর। শিলদার মাওবাদী হামলায় জড়িত। মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডে লেখা নামকে পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি।’’ বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি বুদ্ধদেব ওরফে বুদ্ধেশ্বরের দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালিসিস চলে। মা নিয়তির কথায়, ‘‘শিলদার ঘটনার দিনে ছেলে বাড়িতেই ছিল। পুলিশ যখন ধরে নিয়ে যায় তখন ও ছাত্র। ডাক্তার বলেছে, ছেলের কিডনির প্রয়োজন। জানি না, আরও কত বছর বিচারের আশায় কাটবে।’’

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের মেদিনীপুর শাখার সদস্য অশোক জীবন বলেন, ‘‘বুদ্ধদেবকে এখনও বুদ্ধেশ্বর প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। শিলদা মামলার সব সাক্ষীর বয়ান ১০ বছরেও নিয়ে উঠতে পারেনি। ক্ষমতাশালীরা বেকসুর খালাস হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন