—প্রতীকী চিত্র।
দুর্গাপুরে ডাক্তারির দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল। দুর্গাপুরের শোভাপুর এলাকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া ওই তরুণী ওড়িশার জলেশ্বরের বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে এক পরিচিতের সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, কয়েক জন যুবক তাঁদের উত্ত্যক্ত করেন। তার পর টেনেহিঁচড়ে ওই তরুণীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘নির্যাতিতা’র বয়ান নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে কলেজের বাইরে বেরিয়েছিলেন ডাক্তারির ওই পড়ুয়া। অভিযোগ, নির্যাতনের আগে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল এবং টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়া হয়। পুরুষ সঙ্গীকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় পালিয়ে গেলেও পরে তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করান ওই সঙ্গীই। যদিও ওই সঙ্গীর দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখতে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, “তদন্ত চলছে। পুলিশের কাছে নতুন তথ্য এলে তা জানানো হবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, বিষয়টি সংবেদনশীল। তাই সব দিক মাথায় রেখেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
অন্য পড়ুয়াদের কাছে ঘটনার কথা জানতে পেরেই শনিবার সকালে ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরে আসেন নির্যাতিতার বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যেরা। নির্যাতিতার বাবা জানান, তাঁর মেয়ে এখানে নিরাপদ নন। দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবিও করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে স্বাস্থ্যভবন। দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালকে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়। শুক্রবার বিকেলে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই। এটা সামাজিক অবক্ষয়। পুলিশ তদন্ত করছে।” বিজেপিশাসিত রাজ্যের মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ অগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারির এক পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছিল। ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস রায় ঘোষণা করেন। তিনি জানান, দোষীর সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। সর্বনিম্ন সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বস্তুত, আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে সঞ্জয়ের নাম করেছিল সিবিআই। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণের পর মৃত্যু) এবং ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্জয়কে।
(ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের মতো ঘটনায় আদালত যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। আইনি বাধা রয়েছে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশেও। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম এই ঘটনায় মৃতা ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্রের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে।)