Coromandel Express accident

এক রাতে তিন ছেলেকেই হারালেন মা

শুক্রবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামের তিন ভাই-সহ মোট পাঁচ জনের। পাশের গ্রাম আমড়াতলারও এক জন মারা গিয়েছেন।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ০৮:১২
Share:

হারান গায়েন, নিশিকান্ত গায়েন, দিবাকর গায়েন (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র।

অন্ধ্রপ্রদেশে আর ধান রুইতে যাওয়া হল না। শুক্রবার রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ছড়ানেখালি গ্রামের তিন ভাই-সহ মোট পাঁচ জনের। পাশের গ্রাম আমড়াতলারও এক জন মারা গিয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন দু’জন।

Advertisement

সুন্দরবনের এ তল্লাট থেকে বেশ কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে দিনমজুরি করতে যান অনেকে। সেই মতো শুক্রবারও অন্ধ্রপ্রদেশ যাবেন বলে করমণ্ডলে চড়েছিলেন উত্তর মোকামবেড়িয়ার বিকাশ হালদার (২৪), সঞ্জয় হালদার (২৮), হারান গায়েন (৪৭) এবং তাঁর দুই ভাই নিশিকান্ত গায়েন (৪৫) ও দিবাকর গায়েন (৪১)। বাসন্তীর চড়াবিদ্যার আবু তাহের শেখও (৩৩) ছিলেন ওই দলে ছিলেন। সকলেই ঘটনাস্থলে মারা যান।

শুক্রবার দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উৎকণ্ঠায় রাত কেটেছে গোটা গ্রামের। শনিবার সকালে একের পর এক মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছতে থাকে। ভাইদের নিয়ে একই বাড়িতে থাকতেন হারান। তিন ভাইয়ের উপার্জনেই সংসার চলত। তাঁদের বৃদ্ধা মা সুভদ্রা গায়েন বলেন, “গ্রামে কাজ নেই। সংসার চালাতে তিন ভাই গ্রামের কয়েক জনের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশে রওনা হয়েছিল। আগেও বেশকয়েক বার গিয়েছে। এ বার সব শেষ হয়ে গেল।”

Advertisement

কথা বলতে বলতে মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন সুভদ্রা। হারানের স্ত্রী অঞ্জিতা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। নিশিকান্তের স্ত্রী রেখা দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে জড়ো হয়েছিলেন পড়শি এবং আত্মীয়েরা।

দিবাকরের স্ত্রী বৃহস্পতি বলেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম, এখানে যা হোক করে আমরা চালিয়ে নেব। প্রয়োজনে ভিক্ষা করে সংসার চালাব। কিন্তু ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাজে গেল। মাস খানেকের মধ্যেই ফিরে আসবে, কথা দিয়েছিল। কিন্তু সব শেষ।”

তিন ভাইয়ের মৃত্যুতে ওই পরিবারটিতে আর উপার্জনের কেউ রইলেন না। ছেলেদের স্ত্রী, নাতি-নাতনি নিয়ে সব মিলিয়ে তাঁদের ১২ জনের ভবিষ্যতে কী হবে, বুঝে উঠতে পারছে না সুভদ্রা। তাঁর কথায়, ‘‘এই বয়সে কার কাছে গিয়ে হাত পাতব?’’

ওই পরিবারের আত্মীয় হেমন্ত নস্কর জানান, গ্রামে সে ভাবে কাজ নেই বলে এলাকার বেশির ভাগ পুরুষই চেন্নাই, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরলে দিনমজুরির কাজে যান। জখম দু’জনও ছড়ানেখালির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন