দম্পতিকে বিমানে উঠতে না-দিয়ে খেসারত জেটের

শেষ চার বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এবং সব সময়েই সযত্নে এড়িয়ে চলেছেন নির্দিষ্ট একটি বিমান সংস্থার উড়ান।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

শেষ চার বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। এবং সব সময়েই সযত্নে এড়িয়ে চলেছেন নির্দিষ্ট একটি বিমান সংস্থার উড়ান। এড়িয়ে যাওয়ার কারণ জীবনের মধুক্ষণের একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা। সদ্য-বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে চার বছর আগে কলকাতা বিমানবন্দরের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা এখনও ভুলতে পারেননি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার মণীশকুমার সিংহ।

Advertisement

হাতে ছিল বৈধ টিকিট। গ্যাংটক-নাথু লা যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল নবদম্পতির। হোটেল আর গাড়ির বুকিংয়ের জন্য ২১ হাজার টাকা অগ্রিমও দেওয়া ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে জেট এয়ারওয়েজের কাউন্টারে পৌঁছনোর পরে সস্ত্রীক মণীশকে বলে দেওয়া হয়, বৈধ টিকিট থাকলেও বিমানে তাঁদের জায়গা হচ্ছে না। কারণ, বিমানের সব আসন ভর্তি।

টিকিটের ১৪ হাজার ৫০০ টাকা তো গেলই। সেই সঙ্গে ছিল অন্যান্য লোকসান। অগ্রিমের ১০ হাজার টাকা ফেরত পাননি। সর্বোপরি ম্লান হয়ে যায় ভ্রমণের আনন্দ। মণীশ মামলা ঠুকে দেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। চার বছর পরে অভিযুক্ত বিমান সংস্থা জেট এয়ারওয়েজকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালতের নির্দেশ, জেট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে টিকিটের টাকা ছাড়াও ১০ হাজার টাকা পাবেন মণীশ।

Advertisement

বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও ওই নবদম্পতিকে সে-দিন বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি কেন?

বিমান সংস্থা জানিয়েছে, অনেক সময়ে বিমানের ওজন বেশি হয়ে যাওয়ায় বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও যাত্রীকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয় না। আবার বিমানে যত আসন থাকে, তার চেয়েও বেশি টিকিটও বিক্রি করা হয়। আসন-সংখ্যার চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করা হয় কেন? বিমান সংস্থার যুক্তি, শেষ মুহূর্তে কেউ টিকিট বাতিল করলে তাঁর আসনটি যাতে খালি না-যায়, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। এই রেওয়াজ আছে সারা বিশ্বেই। জেটও তার ব্যতিক্রম নয়।

কিন্তু বৈধ টিকিটধারী কোনও যাত্রী বিমানে উঠতে না-পারলে তাঁকে পরবর্তী উড়ানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। এবং সেই উড়ান ধরার আগে প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে দু’হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়মও আছে। মণীশদের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা হয়নি।

তবে জেট বিমান সংস্থার দাবি, মণীশকে তাঁরা পরের উড়ানে যাওয়ার টিকিট দিতে চেয়েছিলেন। এমনকী নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মণীশ নেননি।

মণীশ ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর বাগডোগরা যাওয়ার জন্য জেট এয়ারওয়েজের বিমানের দু’টি টিকিট বুক করেন। ২০১১ সালে শম্পাদেবীর সঙ্গে বিয়ের পরে মধুচন্দ্রিমা সেরে নিলেও শীতে পাহাড়ে যাবেন বলে পরিকল্পনা করছিলেন ওই যুবক। চাকরির সূত্রে মণীশকে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে হয়। সেই সময় তিনি ছিলেন জামশেদপুরে। উড়ান ধরার আগের রাতে স্বামী-স্ত্রী কলকাতায় আসেন।

মণীশের অভিযোগ, ২২ ডিসেম্বর কলকাতা বিমানবন্দরে গেলে জেটের চেক-ইন কাউন্টার থেকে বলা হয়, বিমানে জায়গা নেই। তাঁরা যেতে পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলেছিলাম, পরের দিনের উড়ানে আমাদের জায়গা করে দিলেও চলবে। কিন্তু অফিসার বলেন, পরের কয়েক দিনের উড়ানেও জায়গা নেই। কবে জায়গা মিলবে, তা-ও বলতে পারেননি ওই অফিসার।’’ পরবর্তী উড়ানে জায়গা না-পাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন যে তাঁদের এক-এক জনকে দু’হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা, জেট সেই বিষয়েও উচ্চবাচ্য করেনি বলে অভিযোগ করেছেন মণীশ।

জেটের বিরুদ্ধে সে-দিনই বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মণীশ। আর কলকাতা জেলা ক্রেতা আদালতে মামলা করেন ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। আবেদনকারীর আইনজীবী নারায়ণ দেবনাথ বিচারকদের কাছে আবেদন জানান, ‘‘মণীশ এবং তাঁর স্ত্রীর নামে বিমানের টিকিট বাতিল হওয়ায় পুরো ট্যুর প্যাকেজ বাবদ প্রচুর টাকা লোকসান হয়েছে। বিমান সংস্থা যাতে অবিলম্বে ওই টাকা মিটিয়ে দেয়, তাদের সেই নির্দেশ দেওয়া হোক।’’

জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সুবীরকুমার চৌধুরী ২১ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দেন, বিমানের টিকিটের দাম বাবদ মামলাকারীকে ১৪,৪৭৬ টাকা ফেরত দিতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁদের হয়রানির জন্য আরও ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে জেটকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন