পাঁচ হাজার কয়েন নিয়ে আতান্তরে পাম্প-মালিক

পুলিশের গুঁতোয় দশ টাকার কয়েন নিয়ে তেল দেওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। এখন গ্রাহকেরাই কয়েন নিচ্ছেন না। কয়েন জমা রাখতে গড়িমসি করছে ব্যাঙ্কও। আজ সেই কয়েন নিয়েই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ব্যবসায়ী গুরুদাস মহন্ত ঘোর আতান্তরে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

ঝাঁপ বন্ধ। — শুভ্র মিত্র

পুলিশের গুঁতোয় দশ টাকার কয়েন নিয়ে তেল দেওয়া শুরু করেছিলেন তিনি। এখন গ্রাহকেরাই কয়েন নিচ্ছেন না। কয়েন জমা রাখতে গড়িমসি করছে ব্যাঙ্কও। আজ সেই কয়েন নিয়েই বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের ব্যবসায়ী গুরুদাস মহন্ত ঘোর আতান্তরে। নোটিস ঝুলিয়ে তেল বিক্রিও বন্ধ করে দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের রবীন্দ্র স্ট্যাচু মোড়ের একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক তাপসবাবু। কয়েনের স্তূপে বসে আক্ষেপ করছেন, কেন সে দিন শুনতে গেলাম পুলিশের কথা!

Advertisement

নোট বাতিলের পরে পরে নগদের অভাবে পাম্পে তেল ভরতে গিয়ে চূড়ান্ত নাকাল হচ্ছিলেন গ্রাহকেরা। ২৪ নভেম্বর রাতে ওন্দার মৌচুড়া এলাকার বাসিন্দা তাপস নন্দী ওই পাম্পে মোটরবাইকে তেল ভরাতে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিল ১০ টাকার কয়েন। সে সময় আবার ১০ টাকার কয়েন অবৈধ বলে জোর গুজব ছড়িয়েছে। তারই জেরে কয়েন নিতে বেঁকে বসেন পাম্পের কর্মীরা। তাপসবাবুর সঙ্গে তাঁদের মধ্যে তুমুল তর্ক বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ গেলেই সুড়সুড় করে কর্মীরা ১০ টাকার কয়েন নিয়ে নেন।

সেই শুরু। সেই থেকেই পুলিশ ‘জুজু’র ভয়ে দশের কয়েন নিয়েই তেল বিক্রি করে গিয়েছেন গুরুদাসবাবু। তাঁর অভিযোগ, এখন গ্রাহক বা ব্যাঙ্ক কেউই তাঁর কাছ থেকে দশের কয়েন নিতে চাইছে না। তাঁর কথায়, ‘‘দেখতে দেখতে ১০ টাকার কয়েনের পাহাড় হয়ে ৫০ হাজার টাকা জমে গিয়েছে। কিন্তু তেল কিনতে আসা লোকজনকে দিতে গেলে নিতে চাইছেন না। ব্যাঙ্কে কয়েন জমা করতে গেলে তারাও না করে দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে কয়েক দিন পাম্পে ১০ টাকার কয়েন নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি।’’ গুরুদাসবাবুর আক্ষেপ, “কয়েন নিতে গিয়ে এখন আমার ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়! শুক্রবার থেকে পাম্প বন্ধ করে দিয়েছি।’’

Advertisement

সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার এবং এসডিও (বিষ্ণুপুর) ময়ূরী ভাসুকে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। এসডিপিও বলেছেন, “জেলার বাইরে রয়েছি। ফিরেই ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসব। দরকারে ব্যাঙ্কের সঙ্গেও কথা বলব।” কিন্তু বিষ্ণুপুর শহরের ভিতরের ওই একটি মাত্র পাম্প ক’দিন ধরে বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা।

শুধু ওই ব্যবসায়ীই নন, ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে দশের কয়েন জমা না নেওয়ার অভিযোগ উঠছে বাঁকুড়া জেলা জুড়েই। ব্যবসায়ীদের দাবি, নোট বাতিলের পরে ব্যাঙ্ক প্যাকেট-প্যাকেট দশের কয়েন গ্রাহকদের দিলেও এখন নিজেরা নিতে চাইছে না। বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপার কথায়, “ব্যবসায়ীরা কয়েন নিলেও ব্যাঙ্ক জমা না নেওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছি। আগেই জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।” তিনি জানান, আজ, সোমবার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গিয়ে দশ টাকার কয়েন জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ব্যাঙ্ক নিতে রাজি না হলে আন্দোলনে নামবে বণিকসভা।

বিষ্ণুপুর শহরের দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে গুরুদাসবাবুর। তাঁর অভিযোগ নিয়ে দু’টি ব্যাঙ্কের কোনও আধিকারিকই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে একটি ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রাহকেরা দশ টাকার কয়েন নিতে রাজি না হওয়ায় ব্যাঙ্কে এত কয়েন রাখতে অসুবিধা হচ্ছে। জেলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চেস্টও উপচে পড়ছে কয়েনে। এর পরে আরও কয়েন জমা পড়লে আমাদেরই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।’’ অন্য এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের মতে, কয়েন মূলত বাজারে চালানোর জন্যই। পুলিশ ও প্রশাসন বিভ্রান্তি কাটাতে ঠিকমতো প্রচার চালালে এই সমস্যা মিটবে বলে তাঁদের আশা।

অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক সাগর রায়ের কথায়, “সব ব্যাঙ্ক নিচ্ছে না, এই অভিযোগ ঠিক নয়। ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, এক সঙ্গে একশোটি করে কয়েন আনতে।” যা শুনে মধুসূদনবাবুর দাবি, মুখে এ কথা বললেও আদপে কয়েন নিতেই চাইছে না ব্যাঙ্কগুলি। এই তরজায় মন নেই গুরুদাসবাবুর। তিনি শুধু চান, কয়েনের পাহাড়ের হিল্লে হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন