Presidency College

‘খতমের শপথ’ নেওয়া প্রেসিডেন্সি পত্রিকার হদিস

নথি থেকে এ কথাও জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্সিতে ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়ানো হত উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। পড়ানো হত আইনও। আইনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২২ ১০:১৪
Share:

‘প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকা’-র ১৯৬৮-৬৯ সালের এই সংখ্যাই পাওয়া গিয়েছে। ছবি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে।

শুরুতেই লেখা ‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদ এবং মাও ৎসে তুং-এর চিন্তাধারা আমাদের দিক্‌নির্ণয় যন্ত্র।’ পরের পাতায় লেনিনের ছবি দিয়ে লেখা, ‘মহান নেতা কমরেড লেনিনের জন্মশতবার্ষিকীতে সংশোধনবাদী এবং নয়া সংশোধনবাদীদের খতম করার শপথ নিচ্ছি।’ পাশের পাতায় মাওয়ের ছবি ও উদ্ধৃতি। এত দিন পরে শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। তবে ‘প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকা’র এমনই একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৮-১৯৬৯ সালে। ছড়িয়ে পড়ার আগেই পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে পত্রিকাগুলি। কিন্তু রয়ে গিয়েছিল অন্তত একটি সংখ্যা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুশো বছরের ইতিহাসের নানান নথি সংরক্ষণের একটি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে সম্প্রতি হদিস মিলেছে সেই দুর্লভ সংখ্যাটির। প্রকল্পের অন্যতম কর্ণধার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এই সংখ্যাটির খোঁজ আমরা যে ভাবে পেয়েছি সেই কাহিনিও সংখ্যাটির মতোই চিত্তাকর্ষক।’’

Advertisement

উপল জানান, বছর তিনেক আগে এই নথি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। প্রেসিডেন্সির চেয়ার প্রফেসর, প্রয়াত স্বপন চক্রবর্তী তার কিছুটা করে গিয়েছিলেন। বর্তমানে উপলের সঙ্গেই প্রকল্পের কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক, প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রোচনা মজুমদার ও প্রেসিডেন্সির সমাজতত্ত্বের শিক্ষক সুকন্যা সর্বাধিকারী। উপল জানান, আগামী ডিসেম্বরে অনলাইন আর্কাইভ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম দফায় ব্রিটিশ লাইব্রেরি এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রকল্পে সহযোগিতা করছে।

এই আর্কাইভের কাজেই ‘প্রেসিডেন্সি কলেজ পত্রিকা’ সংরক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৬৮-৬৯ সালের সংখ্যাটি নেই। উপল জানান, সেই সময়কার প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, পত্রিকার অতিবিপ্লবী বয়ানের জন্য প্রকাশের পরেই পুলিশ পত্রিকাগুলি নিয়ে চলে গিয়েছিল।

Advertisement

নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ রণবীর সমাদ্দারদের মতো প্রাক্তনীরা পত্রিকাটির কথা জানলেও তাঁদের কারও কাছে সেটি ছিল না। তবে খোঁজ থামাননি উপল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী, অভিষেক মুখোপাধ্যায়ের সূত্রে তিনি যোগাযোগ করতে পারেন পত্রিকাটির সম্পাদনা সচিব, তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রেবন্ত ঘোষের সঙ্গে। রেবন্ত হদিস দেন পত্রিকাটি পাওয়া যাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্যের কাছে।

অমিতের কাছে কী ভাবে গেল পত্রিকাটি? অমিত জানান, নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে জেল খাটতে হয়েছিল তাঁকে। পার্ট টু পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। ১৯৭৭ সালে জেল থেকে বেরিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘চেনাজানা কারও নামে বই তোলা যায় কি না সেই খোঁজ নিতে আমি গিয়েছিলাম প্রেসিডেন্সির লাইব্রেরিতে। তখন লাইব্রেরিয়ান প্রবোধকুমার বিশ্বাস পত্রিকাটি আমাকে দেন এবং যত্ন করে রাখতে বলেন। উনি ওই একটি কপি আলাদা করে রেখে দিয়েছিলেন। তখন থেকে পত্রিকাটি আমার কাছে রয়েছে।’’ উপলের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পরে প্রেসিডেন্সিতে গিয়ে পত্রিকাটি ফিরিয়ে দিয়েছেন অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘পত্রিকাটি তো প্রতিষ্ঠানের কাছেই থাকার কথা।’’

কেবল ওই পত্রিকা নয়, প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে উঠে এসেছে আরও অজস্র ইতিহাসের আকর। উপল জানান, বিংশ শতাব্দীর গোড়ায়, জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সিতে পড়াতে পড়াতে যখন গাছ নিয়ে গবেষণা করছেন, তখন সেই গবেষণার জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে তিনি বারবার চিঠি লিখেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের কাছে। কোনও বারই ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সেই অনুদান দেয়নি। সেই সব চিঠি আর্কাইভে থাকছে।

নথি থেকে এ কথাও জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্সিতে ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়ানো হত উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। পড়ানো হত আইনও। আইনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পাওয়া গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন