ফিডিপাইডিস, ইউসরা, গ্রিস, অলিম্পিক্স— অদ্ভুত সমাপতন আজ

জীবন তুচ্ছ করে দৌড়েছিলেন এক গ্রিক সৈনিক। ম্যারাথনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দীর্ঘ পথ দৌড়ে গিয়েছিলেন আথেন্সের জয়ের খবরটা পৌঁছে দিতে। উৎকণ্ঠায় থাকা দেশবাসীকে উল্লাসের খবরটা দিয়েই ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

সিরিয়ার কিশোরী ইউসরা মারদিনি।

জীবন তুচ্ছ করে দৌড়েছিলেন এক গ্রিক সৈনিক। ম্যারাথনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দীর্ঘ পথ দৌড়ে গিয়েছিলেন আথেন্সের জয়ের খবরটা পৌঁছে দিতে। উৎকণ্ঠায় থাকা দেশবাসীকে উল্লাসের খবরটা দিয়েই ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে।

Advertisement

আড়াই হাজার বছর আগে ফিডিপাইডিসের সেই দৌড় অমর হয়ে রয়ে গিয়েছে। তাঁর সম্মানে অলিম্পিক্সও প্রতি বার সামিল হয় ম্যারাথনে।

একটু অন্য ভাবে হলেও, ইউসরা মারদিনিও দৌড়তে শুরু করেছিলেন। সেও নিজের দেশের মানুষগুলোর জন্যই। জীবনকে তুচ্ছ করে দৌড়চ্ছিলেন ফিডিপাইডিসের মতোই। জীবনের দিকে দৌড়চ্ছেন, না মৃত্যুর দিকে, জানতেন না। অদ্ভুত সমাপতন এক! ইউসরার দৌড়ও গিয়ে শেষ হল সেই গ্রিক ভূমিতেই। সমাপতন আরও! ইউসরাকেও সসম্মানে বরণ করে নিচ্ছে অলিম্পিক্স।

Advertisement

গৃহযুদ্ধে দীর্ণ সিরিয়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অপরিসর নৌকায় চেপে সমুদ্রে ভেসেছিল অনেকগুলো পরিবার। ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই রবে তরী যখন ডুবন্ত, ইউসরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সমুদ্রে। সাঁতার জানেন তিনি। অন্য অনেকে জানেন না। তাঁদের বাঁচাতে নিজেকে অপার সমুদ্রের অনিশ্চয়তায় ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। শুধু সাঁতার সম্বল করে। পায়ে মাটি ঠেকবে কি না জানতেন না। কিন্তু সেই ফিডিপাইডিসের দেশের মাটিই গভীর রাতে পায়ের তলায় ঠেকল আশ্রয় হয়ে। আজ পায়ের তলার মাটি আরও অনেক শক্ত। অনেক মহিমান্বিতও।

গৃহযুদ্ধে, হিংসায়, মৃত্যুর উৎসবে এই গ্রহের এক বিরাট অংশ বিধ্বস্ত আজ। হাজারে হাজারে, লাখে মানুষ ঘরছাড়া, উদ্বাস্তু। বিশ্ব মানবতার উদ্‌যাপনের শ্রেষ্ঠ মঞ্চ যদি অলিম্পিক্স হয়, তা হলে সে কী ভাবে ভুলে থাকবে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে? কী ভাবে সে চোখ ফিরিয়ে রাখবে এই জ্বলন্ত বাস্তবতা থেকে? চোখ ফিরিয়ে থাকেওনি অলিম্পিক্স। উদ্বাস্তু, ঘরছাড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে রিও। আর সেই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হয়েই অলিম্পিক্স সাঁতারের আসরে এ বার ইউসরা মারদিনি। আরও এক বার জলে ঝাঁপ দেওয়ার অপেক্ষায়।

জয়তু ইউসরা!

অনেকগুলো জীবনের ধাত্রী আজ আপনি। আপনার মহত্বেই অনেকগুলো প্রাণ সমুদ্রে বিলীন হতে হতেও বেঁচেছে। এ ধরিত্রীতে জীবনের শ্রেষ্ঠ উদ্‌যাপনে আপনিই যদি ডাক না পান, উৎসবের সার্থকতা কোথায় তবে?

জয়তু অলিম্পিক্স!

এমন মহাজীবনকে ধারণ করা অলিম্পিক্সের পক্ষেই সম্ভব।

ফিডিপাইডিসের প্রসন্নতাও হয়তো অনেক বেশি আজ। তাঁর ম্যারাথনের সার্থকতা আরও বেড়ে গিয়েছে এ বার।

জয়তু অলিম্পিক্স! জয়তু ইউসরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন