Medical Science

বাঙালি বিজ্ঞানীর স্টেথোস্কোপে টেলি মেডিসিনে নতুন দিশা

ঝাড়গ্রাম জেলার ভূমিপুত্র অর্ণব দীর্ঘদিন ধরেই মুম্বই প্রবাসী। এখন তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর 'সার্জন কমান্ডার'।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন তাঁর কাছে নতুন নয়। এর আগে তিনি ‘নবরক্ষক পিপিই' আবিষ্কার করেছিলেন, যা করোনা কালে অত্যন্ত কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল। নৌবাহিনীর সেই চিকিৎসক-বিজ্ঞানী, বছর চল্লিশের অর্ণব ঘোষ এ বারে আবিষ্কার করেছেন ‘ইলেকট্রনিক স্টেথোস্কোপ'।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলার ভূমিপুত্র অর্ণব দীর্ঘদিন ধরেই মুম্বই প্রবাসী। এখন তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর 'সার্জন কমান্ডার'। 'স্টাডি লিভ' বা পড়াশোনার জন্য নেওয়া ছুটিতে এখন তিনি আইআইটি মুম্বইয়ে বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচ ডি করছেন। সেখানকার বায়ো সায়েন্স অ্যান্ড বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রোহিত শ্রীবাস্তবের তত্ত্বাবধানেই 'ন্যানো বায়োস ল্যাব'-এ গত দু'বছরের পরিশ্রমে এই স্টেথোস্কোপ বানিয়েছেন, জানালেন অর্ণব নিজেই।

অর্ণব আরও জানাচ্ছেন, এই স্টেথোস্কোপটি মোবাইলে ব্লু-টুথের মাধ্যমে সংযুক্ত করে রোগীর হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের পরিস্থিতি দূরে থাকা চিকিৎসককে নির্ভুল ভাবে জানানো যাবে। শর্ত একটাই, স্টেথোস্কোপটি থাকতে হবে রোগীর কাছে। তা দিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের গর্ভস্থ শিশুরও হৃদস্পন্দনও শোনা যাবে। সাধারণ ফোন কল, ভিডিয়ো কল, হোয়াটসঅ্যাপ- সহ যে কোনও ভয়েস ট্রান্সমিশন প্ল্যাটফর্মে ওই স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা যাবে। যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই, সেখানেও সাধারণ কল করে রোগী তাঁর হৃদস্পন্দন চিকিৎসককে শোনাতে পারবেন।

Advertisement

গত ৪ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে ভারতীয় নৌবাহিনী-সহ একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে অর্ণবের এই স্টেথোস্কোপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। অর্ণব নিজে তাঁর বুকে স্টেথোস্কোপ ঠেকিয়ে হৃদস্পন্দন শোনান। রাজনাথ সে দিন বলেন, “আগামী দিনে গ্লুকোমিটার, পালস্ অক্সিমিটারের মতো এটিও ঘরে ঘরে ব্যবহার করা হবে।” আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাজারে আসছে এই ইলেকট্রনিক স্টেথোস্কোপটি। বিপণনের দাি পেয়েছে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা। অর্ণব বলছেন, “ডিজিটাল স্টেথোস্কোপের তুলনায় এটির দাম তুলনামূলক ভাবে কম হবে।”

অর্ণবের জন্ম, বেড়ে ওঠা ঝাড়গ্রাম শহরে। কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিকের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস। এর পরে দিল্লিতে কার্ডিয়োলজির প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৯ সালে যোগ দেন নৌবাহিনীতে। পুণের আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি) থেকে মেডিসিনে এমডি করেন। ২০১৪- ২০১৮ সেখানেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে গবেষণা করেন অর্ণব। তখনই ‘রিমোট পেশেন্ট মনিটরিং সিস্টেম’, ‘নবরক্ষক পিপিই’ ইত্যাদি আবিষ্কার করেন তিনি। ওই বিশেষ পিপিই তৈরির জন্য ২০২০ সালে দিল্লির সর্দার বল্লভ ভাই পটেল কোভিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে পুরস্কৃত করেন। ওই বছরই ভারতীয় নৌ-সেনাধ্যক্ষের নির্দেশে 'ন্যাভাল ইন্ডিজেনাইজেশন অ্যান্ড ইনোভেশন অর্গানাইজেশন' নামে পৃথক বিভাগ খুলে তার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয় অর্ণবকে।

ঝাড়গ্রামের বাড়িতে আছেন অর্ণবের বাবা- মা। বাবা জগদীশ ঘোষ ব্যবসায়ী। মা তনিমা ঘোষ স্কুল শিক্ষিকা। দু'জনেই বলছেন, “নিজের অধ্যবসায়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছে ও।” নতুন প্রজন্মের প্রতি অর্ণবের বার্তা, “প্রত্যেকে নিজের মতো করে দেশের জন্য কিছু করুন। যাতে দেশ ও দেশবাসীর উপকার হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন