Russia Ukraine War

Russia Ukraine Conflict: বাঙ্কারে তাপমাত্রা শূন্যের নীচে, আমরা জমে যাচ্ছি! খারকিভ থেকে লিখলেন এক বঙ্গসন্তান

খারকিভ থেকে রাশিয়া সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিমি। অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়িতে পশ্চিম ইউক্রেনের লভিব শহরে যাচ্ছেন। ওখান থেকে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি কাছে। কিন্তু যুদ্ধের বাজারে গাড়ি অমিল। জানি না আমরা কবে এই যুদ্ধের দেশ ছাড়তে পারব।

Advertisement

রূপম মণ্ডল

খারকিভ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:২৮
Share:

ছবি পিটিআই।

বুধবার রাত ৩টে। হঠাৎ প্রবল শব্দে কেঁপে উঠল চারপাশ। প্রথমে ভেবেছিলাম ভূমিকম্প বোধহয়! এক বন্ধুর ফোনে ঘুমের রেশ কাটতেই সম্বিত ফিরল। খোঁজ নিয়ে জানলাম, আশপাশে কোথাও ক্ষেপণাস্ত্র হানা হয়েছে। সে জায়গা আমাদের এলাকা থেকে অনেকটা দূরে, এই ভেবে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু সেই স্বস্তিটুকুও উধাও হয়ে গেল শুক্রবার সকালে। আমাদের শহর খারকিভের কেন্দ্রস্থল নকোভায় ক্ষেপণাস্ত্র হানা হল এ বার। ধ্বংস হয়েছে অনেক কিছুই। আর না ফাটা ক্ষেপণাস্ত্র রাস্তাতেই গেঁথে রয়েছে।

Advertisement

মোবাইল হাতে নিতেই এখন কেমন ভয় করছে। সংবাদমাধ্যমে, সমাজমাধ্যমে শুধুই যুদ্ধের আর ধ্বংসের খবর, ছবি। আঁতকে উঠছি। বিদেশে ডাক্তারি পড়তে এসে এমন দুর্বিপাকে পড়ব, ভাবিনি কোনও দিন। ইউক্রেনে এসেছি ২০১৮ সালে। ভিএন কারাজ়িনা খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্নাতকস্তরে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আমি। খারকিভ শহরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি বহুতলের একতলায় আরও দুই বাঙালি সহপাঠীর সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। ওরা উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। আর আমি ঝাড়গ্রামের ছেলে। বাবা চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী। মা শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। ওঁরা খুবই চিন্তায় আছেন। যুদ্ধ বেধে যাওয়ায় আমারও ভয় করছে। পুরোদস্তুর ডাক্তার হতে এখনও বছর তিনেক লাগবে। কিন্তু পড়াশোনাটা কি আদৌ শেষ করতে পারব?

রাস্তায় গেঁথে রয়েছে না-ফাটা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। খারকিভ শহরের নকোভা এলাকায়। শুক্রবার সকালে। ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সৌভাগ্যক্রমে আমরা যে বাড়িতে থাকি সেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার রয়েছে। বুধবার রাতেই সেখানে আশ্রয় নিয়েছি। তাপমাত্রা শূন্যের নীচে। বাঙ্কারে হিটার নেই। গরম পোশাক পরেও ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। সঙ্গে সম্বল বলতে দিন ছ’য়েকের খাবার। এ ক’দিন রাত হলেই খাবার, পানীয় জল কিনতে দোকানে লম্বা লাইন পড়ছিল। শুক্রবার হামলার পরে দোকানপাটও বন্ধ। যাঁদের বাড়িতে বাঙ্কার নেই, তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন। আশপাশের কিছু লোক আমাদের বাঙ্কারেও এসেছেন। আমরা যে সংস্থার মাধ্যমে পড়তে এসেছি, তারা ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিল। জানানো হয়েছে, যাদের ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে তাঁরা হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়ায় ভিসা ছাড়াই ঢুকতে পারবেন।

Advertisement

খারকিভ থেকে রাশিয়া সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিমি। অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়িতে পশ্চিম ইউক্রেনের লভিব শহরে যাচ্ছেন। ওখান থেকে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি কাছে। কিন্তু যুদ্ধের বাজারে গাড়ি অমিল। জানি না আমরা কবে এই যুদ্ধের দেশ ছাড়তে পারব।

লেখক খারকিভের ডাক্তারি পড়ুয়া

অনুলিখন: কিংশুক গুপ্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন