mid-day meal scheme

পরশু আসছে দল, স্কুলে স্কুলে খাদ্য-সতর্কতা

সরকারি সূত্রের খবর, স্কুলে স্কুলে যথাযথ পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মিড-ডে মিল খাওয়ানো হচ্ছে কি না, মূলত সেটাই খতিয়ে দেখতে আসছে কেন্দ্রীয় সরকারের দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৩
Share:

সোমবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সফর ঘিরে রাজ্য সব রকম সতর্কতা নিয়েছে। ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বঙ্গে বাড়ি তৈরির কাজ দেখতে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল এত অভিযোগ পেয়েছে যে, তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি সরগরম। এই অবস্থায় স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিলের পরিস্থিতি দেখতে ৩০ জানুয়ারি, সোমবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সফর ঘিরে রাজ্য সব রকম সতর্কতা নিয়েছে। তার অঙ্গ হিসেবে দিল্লির দল আসার আগেই রাজ্যের দল এক দফা স্কুল পরিদর্শন সেরেছে। কেন্দ্রীয় দলের জন্য কী ভাবে তৈরি থাকতে হবে, ভাল ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন স্কুলকে।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, স্কুলে স্কুলে যথাযথ পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মিড-ডে মিল খাওয়ানো হচ্ছে কি না, মূলত সেটাই খতিয়ে দেখতে আসছে কেন্দ্রীয় সরকারের দল। এই পরিস্থিতিতে ওই প্রকল্প চালানোর ক্ষেত্রে কী কী ‘সতর্কতা’ প্রয়োজন, তা জানিয়ে স্কুলগুলিকে সচেতন করছে শিক্ষা দফতর। ডিআই বা জেলা স্কুল পরিদর্শকদের দফতর থেকে এ বিষয়ে স্কুলগুলির কাছে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে বলেও শিক্ষা সূত্রের খবর।

সেই সূত্রেই অনেকে সম্প্রতি রাজ্যে আবাস যোজনার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দলের সামনে ওঠা নানান অভিযোগের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ ওঠায় সামগ্রিক পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের পক্ষে মোটেই স্বস্তিকর হয়নি। তাই মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি রুখতে শিক্ষা দফতর আগেভাগে সতর্ক হয়েছে। মিড-ডে মিলের বরাদ্দ নিয়ে তো অভিযোগ আছেই। খাবারের গুণমান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। খাবারে সাপ, টিকটিকি পড়ে বিষক্রিয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

মিড-ডে মিল প্রকল্পে কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ এবং রাজ্যের ৪০ শতাংশ অংশীদারি আছে। এই প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপান-উতোর আজকের নয়। রাজ্যের দাবি, এই খাতে কেন্দ্রের তরফে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কেন্দ্রের অভিযোগ, রাজ্য সরকার এখনকার বরাদ্দ অর্থই যথাযথ ভাবে ব্যবহার করে না। ফলে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের প্রেক্ষিতেও দিল্লির প্রতিনিধিদের এই বঙ্গ সফর তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

হাওড়া ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস জানান, ইতিমধ্যেই শিক্ষা দফতরের অফিসারেরা এসে মিড-ডে মিলের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেছেন। মিড-ডে মিলের রেজিস্টার ঠিকমতো লেখা, রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন ও খাবারের পাত্র ঢেকে রাখার সঙ্গে সঙ্গে চালের মান ঠিক আছে কি না, গরম খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে কি না? সেই সব দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। সব পড়ুয়া দুপুরের খাবার খাচ্ছে কি না, তা-ও দেখতে বলেছেন শিক্ষা দফতরের কর্তারা। বিশেষত আগামী কয়েক দিন সব ছাত্রছাত্রীই যাতে মিড-ডে মিল খায়, সে-দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নাঘরের ছাদ নেই। শিক্ষা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই সব ক্ষেত্রে ছাদ না-থাকলে ত্রিপল টাঙাতে বলা হয়েছে। কলকাতায় একটি রান্নাঘরে খাবার তৈরি করে বিভিন্ন স্কুলে পাঠানো হয়। কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “গাড়িতে খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় তা ঢেকে রাখতে হবে। খাবার যাতে পথেই ঠান্ডা হয়ে না-যায়, সেটা খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।”

কেন্দ্রীয় দলের সফরের মুখে এই তৎপরতা নিতান্ত ক্ষণিকের ব্যাপার কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হন্ডা বলেন, “এখন কেন্দ্রীয় দল আসছে বলে এত কিছু নির্দেশ। কিন্তু মিড-ডে মিল ঠিক ভাবে চালানোর পরিকাঠামো নেই অনেক স্কুলেই। রাতারাতি সব বদল করা কি সম্ভব? অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে মিড-ডে মিল রান্না হয় কাঠকুটো জ্বেলে। কারণ, সেখানে গ্যাস নেই। সে-ক্ষেত্রে কী ভাবে বদল সম্ভব?” শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, দিল্লির প্রতিনিধিদের কাছে মুখরক্ষার তাগিদে ক্ষণ-সতর্কতার বদলে মিড-ডে মিলের নানান সমস্যার স্থায়ী সুরাহায় নজর দেওয়া জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন