TMC

অঞ্চল থেকে ব্লক সভাপতি, রত্নাকর তবু নৈশপ্রহরী

সিউড়ি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রত্নাকর মণ্ডল একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরীর কাজ করছেন টানা আট বছর।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৬
Share:

রত্নাকর মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

গরুপাচার মামলায় জেলে রয়েছেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। জেলায় দলের একাধিক নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সেই বীরভূমে শাসকদলের এমন এক নেতা আছেন, যিনি নৈশপ্রহরীর কাজ করে সংসার চালান। দলও মানছে, এমন মানুষ বড় একটা দেখা যায় না।

Advertisement

সিউড়ি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রত্নাকর মণ্ডল একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈশপ্রহরীর কাজ করছেন টানা আট বছর। কাজ থেকে কদাচিৎ ছুটি নেন তিনি। রাতে পড়ুয়ারা সকলে ছাত্রাবাসে নিরাপদে আছেন কি না, সেটা দেখাই তাঁর কাজ। আর পাঁচ জন নৈশপ্রহরীর সঙ্গে তাই রত্নাকরকে আলাদা করা মুশকিল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্লক সভাপতি। অঞ্চল সভাপতি থেকে সরাসরি ‘পদোন্নতি’ পেয়ে ব্লক সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেও নিজের পেশা বদলাননি রত্নাঙ্কর। বর্তমান আবহে সহজ সরল জীবনযাত্রার এই মানুষটিকে পরিচিত বৃত্তের লোকজন তাই সম্ভ্রমের চোখে দেখেন।

বছর বাষট্টির রত্নাকর অবশ্য বলছেন, ‘‘দল স্বীকৃতি ও দায়িত্ব দিয়েছে। সেটা সাধ্যমতো পালনের চেষ্টা করি। তবে, আয় তো বাড়েনি। খানিকটা কৃষিজমি থেকে আর নৈশপ্রহরীর কাজ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। ব্লক সভাপতি হওয়ার পরে অনেকেই বলেছেন কাজ ছেড়ে দিতে। আমি রাজি হইনি। কাজ ছাড়লে চলবে কী করে!’’

Advertisement

রত্নাকর সম্পর্কে সিউড়ির বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ভদ্র, ধর্মপ্রাণ মানুষ। রাতভর ডিউটি করেও দলীয় কর্মীদের যে কোনও সমস্যায় পাশে তিনি থাকেন। দলের প্রতি একনিষ্ঠ এমন মানুষকেই তো দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’’ বিডিও (সিউড়ি ১) শিবাশিস সরকারও মানছেন, ভদ্র ও সৎ মানুষ রত্নাকর। সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে কোভিডে মৃত্যু হয় সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বর্ণশঙ্কর সিংহের। সিউড়ি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল জিতলেও বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় আশানুরূপ ফল হয়নি। সংগঠন ধরার জন্য কাউকে বাছতে হত। শীর্ষ নেতৃত্ব ভুরকুনা অঞ্চল সভাপতি রত্নাকরকেই ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেয়। স্থানীয় পানুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা রত্নাকর। প্রথমে কংগ্রেস করতেন। পরে তৃণমূলে এসেছেন। এলাকায় কেউ কেউ তাঁকে রতনদা বলে ডাকেন। পদোন্নতি হওয়ার পরেও জীবনধারা বদলাতে চাননি। নিয়ম করে সন্ধ্যা ৭টায় ডিউটি ধরা, পরের দিন ভোরে বাড়ি ফেরা। রত্নাকরের কথায়, ‘‘সৎ পথে অর্জিত অর্থের বাইরে লোভ করা পাপ। বেশ কিছুটা কৃষিজমি রয়েছে আমাদের পরিবারের। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। নগদ অর্থের প্রয়োজনে নৈশপ্রহরীর কাজে যোগ দিয়েছি।’’

দলের কর্মীদের একাংশ জানান, সিউড়ি ১ ব্লকে বালি কারবারের রমরমা। রয়েছে তাপবিদ্যুতের ছাইয়ের কারবারও। চাইলে অনায়াসে বহু টাকা আয় করতে পারতেন। কিন্তু, সে পথে হাঁটেননি ব্লক সভাপতি। আলুন্দার পঞ্চায়েতের প্রধান রুবিদা বিবি, ভুরকুনার প্রধান রেখা বাগদি বলছেন, “অত্যন্ত ভাল মানুষ আমাদের ব্লক সভাপতি।” তবে, সৎ হলেও সংগঠনের কাজে ততটা দর নন রত্নাকর, এমন মতও দলে আছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement