বিচারকের আসনে রূপান্তরকামী

রূপান্তরকামীদের অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে এই ঘটনাকে বড় পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২৯
Share:

অভিযোগ শুনছেন সুমনা।

অনাথ আশ্রম থেকে লড়াই শুরু। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মরিয়া তাগিদের সঙ্গে আরও একটা দুরূহ লক্ষ্য ছিল তাঁর। নিজের রূপান্তরকামী সত্ত্বাকে শত বাধার মধ্যে সমাজে গ্রহণযোগ্য করা এবং সেই সত্ত্বা আঁকড়ে মাথা উঁচু করে বাঁচা। শনিবারের দিনটি ছিল বছর তেইশের সুমনা প্রামাণিকের জিতে যাওয়ার দিন। জাতীয় লোক আদালতে এ দিন বিচারকের আসনে বসলেন তিনি। তৈরি করলেন নজির। নদিয়া জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের মতে, রূপান্তরকামীরা সমাজেরই এক জন, এই ইতিবাচক বার্তা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত। রূপান্তরকামীদের অধিকার অর্জনের লড়াইয়ে এই ঘটনাকে বড় পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

শনিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কৃষ্ণনগরে সুমনার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল গাড়ি। তাতে চেপেই লোক আদালতে যান তিনি। সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত সেখানেই সামলালেন বিচারকের গুরুদায়িত্ব। কৃষ্ণনগর জেলা আদালত চত্বরে রয়েছে ‘অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রেজোলিউশন সেন্টার’। এ দিন সেখানেই বসে জাতীয় লোক আদালত। তিনটি বেঞ্চ ছিল। প্রতি বেঞ্চে তিন জন করে বিচারক। এর মধ্যে এক‌টি বেঞ্চের অন্যতম বিচারকের আসনে বসেন সুমনা।

প্রায় এক হাজার মামলা বকেয়া ছিল আদালতে। তার মধ্যে এ দিন প্রায় সাড়ে চারশো মামলার নিষ্পত্তি হয়। জেলা লিগাল সার্ভিস অথরিটির সম্পাদক মদনলাল জানা বলেন, “সুমনা প্রামাণিক কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। সংবিধান অনুযায়ী সব বিষয়ে তাঁর সমানাধিকার রয়েছে। আমরা সেই বার্তাই দিতে চেয়েছি সকলের কাছে।’’ রূপান্তরকামীদের প্রতি মানুষের অযথা বিদ্বেষ, ভূল ধারণা যাতে কেটে যায়, সমাজে তাঁরা যেন সুস্থভাবে থাকতে পারেন, তার জন্যই এমন পরিকল্পনা বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

মাত্র ছ’ বছর বয়সে তাঁর নিজের পরিবার ত্যাগ করেছিল সুমনাকে। ছেলে ‘অন্যরকম’ বুঝে অভিভাবকেরা মানতে পারেননি। রেখে এসেছিলেন করিমপুরে এক‌টি অনাথ আশ্রমে। সেখান থেকেই করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। কৃষ্ণনগরের বিজয়লাল ইন্সটিটিউট থেকে পাশ করেন উচ্চ মাধ্যমিক। তার পর বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজ থেকে গনিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। প্রাইভেট টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। এখন কৃষ্ণনগরে ঘর ভাড়া নিয়ে একাই থাকেন। সুমনার কথায়, “রূপান্তরকামী হিসাবে প্রতিদিন অত্যাচারিত হই আমরা। প্রতিদিন যুদ্ধ চালাতে হয় আমাদের। আজ এই জায়গা পেয়ে সত্যিই খুব ভাল লাগছে। সকলের থেকে খুব ভাল ব্যবহার ও সম্মান পেয়েছি। লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে গেলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement