Coronavirus in West Bengal

করোনাজয়ী দিদির অঙ্গ দানে নতুন জীবন বোনের

৯ মে করোনামুক্ত হয়ে ফেরেন লিজা। ২০ মে লিজার লিভারের অংশ প্রতিস্থাপন করা হয় দিশার শরীরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০৬:২৮
Share:

চিকিৎসক সুভাষ গুপ্তের সঙ্গে দুই বোন। নিজস্ব চিত্র

শুধু করোনাকেই জয় করলেন না। নিজের অঙ্গ দান করে বোনকে নতুন জীবন দিয়ে জীবন যুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পাঁশকুড়া বনমালী কলেজের মাইক্রোবায়োলজির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লিজা সামন্ত। টানা পাঁচ মাসের লড়াই শেষে এখন সুস্থ দিদি-বোন দু’জনেই। পাঁশকুড়ার দুই বোনের জীবনযুদ্ধে লড়াইয়ের কাহিনী এখন এলাকার সকলের মুখে মুখে।

Advertisement

যুদ্ধের শুরু মাস পাঁচেক আগে। মঙ্গলদ্বারি গ্রামের অসীম কুমার সামন্ত পেশায় বিমা কর্মী। ৮ ফেব্রুয়ারি লিভারের সমস্যা দেখা দেয় অসীমের ছোট মেয়ে দিশার। পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দিশাকে ৯ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর শহরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার নার্সিং হোমে। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় দিশাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে শয্যা মেলেনি। চিকিৎসকের পরামর্শে ৬ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে দিশাকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, দিশাকে বাঁচাতে গেলে তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি। সামন্ত দম্পতি লিভার দানে রাজি হলেও মেয়ের লিভারের সঙ্গে তা ম্যাচ না করায় কাজ হয়নি। খবর পেয়ে ১৪ মার্চ দিল্লি পৌঁছন লিজা। তাঁকে পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, দিদির লিভারের অংশ বিশেষ দিয়ে বোনকে সুস্থ করা যেতে পারে। সব ঠিক হওয়ার পরে বিপত্তি দেখা দেয়। অস্ত্রোপচারের জন্য লিজার কোভিড-১৯ পরীক্ষায় রিপোর্ট আসে করোনা পজ়িটিভ। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সামন্ত পরিবারের। দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন লিজা। অন্যদিকে ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে দিশার। আইসিইউতে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় তাকে।

৯ মে করোনামুক্ত হয়ে ফেরেন লিজা। ২০ মে লিজার লিভারের অংশ প্রতিস্থাপন করা হয় দিশার শরীরে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের অস্ত্রপচারে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে বারো আনা। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। চিকিৎসকদের সেই লড়াইয়ে সমানে সহযোগিতা করেছেন লিজা। শেষে জয়ী হয়েছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন বোনকে। হাসপাতালের চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুভাষ গুপ্ত বলেন, ‘‘এটা খুবই জটিল অস্ত্রোপচার ছিল। তার ওপর লিভার দাতা করোনা পজ়িটিভ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। দুই বোনই ভাল আছে।’’

Advertisement

লিজার কথায়, ‘‘যেই মুহূর্তে আমি বোনকে লিভার দান করতে তৈরি হলাম, তখনই করোনায় আক্রান্ত হই। তবে ভেঙে পড়িনি। হাসপাতালে শুয়ে দিন গুনেছি কবে সুস্থ হয়ে উঠে বোনকে লিভার দান করব। ঈশ্বরের দয়ায় তা সম্ভব হয়েছে।’’ নতুন জীবন ফিরে পেয়ে দিশার জবাব, ‘‘মা-বাবা আমাকে জন্ম দিয়েছেন। দিদির জন্য পুনর্জন্ম হল। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, এ রকম দিদি যেন সবার ঘরে থাকে।’’

অসীম সামন্ত বলেন, ‘‘হার না-মানা জেদ নিয়ে টানা পাঁচ মাস লড়াই করেছি। দুই মেয়েও এতটুকু মনোবল হারায়নি। চিকিৎসক সুভাষ গুপ্ত ও চিকিৎসক রাজেশ দে-সহ গোটা ইউনিটকে ধন্যবাদ। ২০ তারিখ বাড়ি ফিরব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন