Coromandel Express accident

পাঁচ বছর আগে মৃত মাকে করমণ্ডলে নিখোঁজ সাজালেন ছেলে, চাকরির দরবার পটনার যুবকের

শোককাতর মানুষের প্রতিমূর্তি সেজে জানিয়ে দিয়েছিলেন, খোদ রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না-করে এক পা-ও নড়বেন না। বাহ্যত মাকে খুঁজে দেওয়ার আকুল আবেদনই ছিল তাঁর মূলধন।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৩ ০৭:১১
Share:

র্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেস। —ফাইল চিত্র।

মৃতদেহ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ প্রায়শই তোলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নিছক রুটিরুজির তাগিদে কমবেশি পাঁচ বছর আগে মৃত মাকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের নিখোঁজ যাত্রী সাজিয়ে এক যুবকের একটি চাকরির আকুতি এবং নাছোড় দরবার রেল মহলকে অবাক করে দিয়েছে।

Advertisement

বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতেই পটনার ওই যুবক বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাকে ব্যবহার করে চাকরি জোগাড়ের কাজে নেমেছিলেন। শোককাতর মানুষের প্রতিমূর্তি সেজে জানিয়ে দিয়েছিলেন, খোদ রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না-করে এক পা-ও নড়বেন না। বাহ্যত মাকে খুঁজে দেওয়ার আকুল আবেদনই ছিল তাঁর মূলধন। অভিনয় এত নিখুঁত ছিল যে, ঘাবড়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও। তাঁরা দু’-দু’বার ওই যুবককে ফেরত পাঠান রেল মন্ত্রকে। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, করমণ্ডলের দুর্ঘটনার পরে তিনি মায়ের খোঁজ পাচ্ছেন না। ওড়িশায় রেল, হাসপাতাল, স্থানীয় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও সুরাহা হয়নি। কেউ তাঁর কথা শুনতে চাননি। মরিয়া হয়ে রেল মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন।

সব শুনে মন্ত্রকের আধিকারিকেরা জরুরি বার্তা পাঠান গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদরে। মন্ত্রকের তলব পেয়ে সর্বোচ্চ তৎপরতায় খোঁজ শুরু করেন স্থানীয় আধিকারিকেরা।

Advertisement

ওই ব্যক্তি আধিকারিকদের জানান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এস-৩ (স্লিপার) কামরার যাত্রী ছিলেন তিনি এবং তাঁর সত্তরোর্ধ্ব মা। তিনি নিজে দরজার কাছে ছিলেন, দুর্ঘটনার অভিঘাতে ছিটকে বাইরে পড়ে গিয়ে চেতনা হারান। জ্ঞান ফিরলে তন্নতন্ন করে খুঁজেও মায়ের হদিস পাননি। ওই ব্যক্তি তাঁদের টিকিটের তথ্য দিতে পারেননি। কোথায় টিকিট কাটা হয়েছে, বলতে পারেননি তা-ও। শুধু জানান, এক এজেন্ট টিকিট কেটে দিয়েছেন। সংরক্ষিত টিকিটের রিকুইজিশন স্লিপ ও প্রতীক্ষা তালিকায় খোঁজ করা হয়। যে-সব স্টেশনে ওই ট্রেন থেমেছে বা যাত্রীরা উঠেছেন, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ছবি আনিয়ে সন্ধান চলে। শালিমার, সাঁতারগাছি, খড়্গপুর, বালেশ্বর প্রভৃতি স্টেশন ছিল ওই তালিকায়।

তার পরে পিএনআর-তথ্য ধরে এস-৩ কামরার সব যাত্রীকে ফোন করে ওই মহিলার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সব শেষে যাত্রীদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে শেয়ার করা হয় ওই ব্যক্তির প্রবীণা মায়ের ছবি। কিন্তু সেখানে কেউই কোনও হদিস দিতে পারেননি। এমনকি ওই কামরায় যাঁরা উদ্ধারকাজ চালিয়েছিলেন, তাঁরাও জানান, এমন কোনও মহিলাকে দেখা যায়নি।

তার পরেই রেল আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে ভেঙে পড়েন ওই ব্যক্তি। জানান, তাঁর মা ২০১৮ সালেই মারা গিয়েছেন। আসলে একটি চাকরি তাঁর খুব দরকার। তাই তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁর ক্ষতিপূরণ প্রয়োজন নেই, কিন্তু একটি চাকরি খুব দরকার।

রেল মন্ত্রকের খবর, মানবিকতার খাতিরে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাঁকে সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বালেশ্বরে ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের বেশির ভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের বাসিন্দা। তাই ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য শেষ পর্যন্ত খোঁজ চালাতে হয়েছে আমাদের।’’

রেল আধিকারিকেরা জানান, এখনও ৮২টি মৃতদেহের দাবিদার মেলেনি। নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রিয়জনের খোঁজে এখনও হন্যে হয়ে ঘুরছেন বহু মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন