সরকারি খাতায় ওঁদের পরিচয় শুধু নম্বরে অথবা কোনও নামে। বছরের পর বছর এই পরিচয় নিয়েই তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন হোমের চার দেওয়ালে। সরকারি ভাবে ওঁদের কোনও পরিচয়পত্র আছে কি না তা-ও অজানা। এ বার ওঁদের জন্যই চালু হচ্ছে আধার কার্ড।
রাজ্য মহিলা, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ১৭টি সরকারি, ৪৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোম আছে রাজ্যে। দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, সংশ্লিষ্ট জেলার সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে জেলাশাসকের কাছে আবেদন করে এই আধার কার্ড হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ওঁদের আনতে গেলে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি এটি হলে ওঁদের একটা পরিচয়পত্র তৈরি হবে।’’ সে ক্ষেত্রে যত দিন মহিলা ও শিশুরা হোমে থাকবেন, তত দিন কার্ডে হোমের ঠিকানাই লেখা থাকবে।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার লিলুয়া হোমের আবাসিকদের আধার কার্ড করানো হবে। ধীরে ধীরে রাজ্যের সব হোমগুলিতেই এই ব্যবস্থা হবে। লিলুয়া হোমের পর্যবেক্ষক তথা বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া জানান, এখানে ৩০০ আবাসিকের মধ্যে বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা-সহ অন্য দেশের মহিলাও রয়েছেন। তবে যাঁরা এ দেশের নাগরিক তাঁদেরই আধার কার্ড করা হবে। শশীদেবী বলেন, ‘‘সব হোমেই শুধুমাত্র নাগরিকদের জন্য আধার কার্ড করানো হবে।
দফতর সূত্রে খবর, হোম থেকে কার্ড তৈরি করা থাকলে, পরে তাঁকে এ জন্য ছোটাছুটি করতে হবে না। শুধু ঠিকানা পরিবর্তন করলেই চলবে। ইতিমধ্যে হোম সম্পর্কে ধারণা বদলাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য। মহিলা, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, এখন হোম থেকেই হস্তশিল্প, মৎস্য প্রতিপালন, এমব্রয়ডারি, তাঁতের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করা হচ্ছে আবাসিকদের।
দফতর সূত্রের খবর, প্রশিক্ষণের পরে তৈরি জিনিস বিক্রি করে রোজগারের পথও রয়েছে তাঁদের। আয়ের সেই টাকা জমা থাকবে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেই সব টাকা পেতেও আবাসিকদের আধার কার্ড বাধ্যতামূলক। কারণ, কেন্দ্রের নিয়মানুযায়ী, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার লিঙ্ক না করা থাকলে লেনদেনে সমস্যা হবে। আবার অনেক হোমই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্প ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড প্রোটেকশন স্কিম (আইসিপিএস) ও ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (আইসিডিএস)-এর আওতায় রয়েছে। ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতেও আধার কার্ড বাধ্যতামূলক।