সারদার জুটি এ বার সবং নিয়েও ময়দানে! পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার তোড়জোড় শুরু করলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। নিহত ছাত্রের পরিবারের তরফেই প্রাথমিক ভাবে মামলা দায়ের করার তৎপরতা চলছে। তাঁদের সঙ্গেই মামলায় অংশীদার হবেন মান্নান। আর তাঁদের হয়ে আইনজীবী হিসাবে দাঁড়াবেন কলকাতায় সিপিএম-পুরবোর্ডের প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য। জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে মান্নান-বিকাশ জুটিই সুপ্রিম কোর্ট থেকে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ আদায় করে এনেছিলেন।
সবংয়ের ওই কলেজে ক্যাম্পাসের মধ্যেই আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে কৃষ্ণপ্রসাদের। ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে। ঘটনার পরেই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন, যে ভাবে অভিযুক্তদের ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করেছেন জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ, তাতে রাজ্য পুলিশের হাতে সবং-কাণ্ডের বিচার পাওয়া সম্ভব নয় বলেই মান্নানেরা মনে করছেন। কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারেরও একই অভিমত জেনে তাঁরা সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থের মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁদের মাথায় রাখতে হচ্ছে সদ্য বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষের ভোলবদলের দৃষ্টান্ত। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় হৃদয় ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সাগরবাবু। তাঁর অভিযোগ ছিল বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর দলবলের দিকে। সাগরবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি। কিন্তু কয়েক দিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন সাগরবাবু। সেই প্রেক্ষিতেই মান্নানদের আশঙ্কা, সবংয়ে নিহত ছাত্রের পরিবারের উপরেও ভবিষ্যতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে শাসক দল। তাই এমন ভাবে মামলা সাজানোর প্রস্তুতি চলছে, যাতে কোনও এক পক্ষ পিছিয়ে এলেই মামলা না প্রত্যাহার হয়ে যায়।
মামলার বিষয়টি নিয়ে এ দিন সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া ও আইনজীবী বিকাশবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সেরেছেন মান্নান। পরে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই আসল ঘটনা চেপে যেতে চাইছে। কলেজে ১৫টি সিসিটিভি-র মধ্যে মাত্র তিনটির ফুটেজ দেখিয়ে পুলিশ সুপার অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছেন! এঁদের কাছে বিচার পাওয়ার আশা নেই। সিবিআই তদন্ত চেয়ে আমরা তাই হাইকোর্টে আর্জি জানাব।’’ মানসবাবু বলেন, নিহত ছাত্রের পরিবারের অভিযোগকে এফআইআর হিসাবে নিতে চায়নি পুলিশ। তাঁদের এখন প্রথম লক্ষ্য, আদালতের মাধ্যমে ওই পরিবারের অভিযোগ গ্রাহ্য করানো। মানসবাবুর কথায়, ‘‘আমিও মনে করি, তদন্ত ঠিক পথে চলছে না। এখন ওই ছাত্রের পরিবার যা চাইবে, সেই ভাবেই এগোনো হবে।’’ মামলার প্রসঙ্গে নিহত ছাত্রের দাদা নারায়ণ জানাও এ দিন বলেছেন, ‘‘ভাইয়ের মৃত্যুর ঠিক তদন্ত হোক, এটাই চাই। প্রয়োজনে আমরা ব্যক্তিগত ভাবেও আদালতের দ্বারস্থ হব। জেলা পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে পারছি না।’’