প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেটের প্রশ্ন-ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে নাম জড়ানোয় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে আইনজীবীর চিঠি পাঠালেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টেটের প্রশ্নপত্র উধাওয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ডাককর্মী দুই তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ অনুগামী’ বলে রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে মন্তব্য করেছিলেন বিমানবাবু। ওই মন্তব্যের জেরে অভিষেকের মানহানি হয়েছে এবং তাঁর ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে বলে সোমবার বিমানবাবুকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী সঞ্জয় বসু। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একই রকম ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে বিমানবাবুকে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনমাফিক পদক্ষেপ করা হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের মন্তব্য বন্ধ করতেও বলা হয়েছে বিমানবাবুকে।
সিপিএম সূত্রের খবর, আলিমুদ্দিনে এ দিন ফ্যাক্স মারফত আইনজীবীর চিঠি পৌঁছেছে। তবে এ দিন সন্ধ্যায় বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘আমি এখনও চিঠি দেখিনি। আমরা এখন বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তার আগে এ সব নিয়ে ভাবছিই না!’’ আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, তৃণমূলের যুবরাজ যদি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত লড়াই টেনে নিয়ে যান, তার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হবে বিমানবাবুর তরফেও।
আইনি নোটিসে অভিষেকের আইনজীবীর বক্তব্য, ডাককর্মী অরূপ দাস ও অরূপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে টেটের প্রশ্নপত্র-ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণে তাঁদের সাসপেন্ডও করা হয়েছে। সেই দুই অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর মক্কেলের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে মন্তব্য করে কৌশলে ও পরোক্ষ ভাবে বিমানবাবু সাংসদ অভিষেককেও এই ঘটনায় জড়িয়ে ফেলেছেন। যে ভাবে ওই মন্তব্য করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, অভিষেকও পরীক্ষার্থীদের প্রতারণা করেছেন এবং পরীক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর কোনও দায়বদ্ধতা নেই। কোনও খোঁজখবর না নিয়ে, তথ্য যাচাই না করে যে ভাবে বিমানবাবু সাংবাদিক সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেছেন, তাতে অভিষেকের ‘স্বচ্ছ ও নিষ্কলঙ্ক’ ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নোটিসের দাবি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ওই সাংবাদিক সম্মেলন করে বিমানবাবু রাজ্যের মানুষকে বিপথে চালিত করতে চেয়েছেন, এমনই অভিযোগ অভিষেকের আইনজীবীর।
বিমানবাবু প্রকাশ্যে পাল্টা মন্তব্য করতে না চাইলেও ডাককর্মীদের সংগঠন এফএনপিও-র সূত্রে ইতিমধ্যেই কিছু তথ্য আলিমুদ্দিনের হাতে এসেছে। জাতীয় স্তরে ওই সংগঠন আইএনটিইউসি তথা কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হলেও এ রাজ্যে তারা তৃণমূলের আইএনটিটিইউসি-র সঙ্গেই জড়িয়ে। অভিযুক্ত দুই অরূপ এফএমপিও-র দক্ষিণ হুগলি ডিভিশনে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সম্পাদক। সিপিএম সূত্রের দাবি, তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে ওই ডিভিশনেরই এক এসএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকের, যাঁর বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। টেটের প্রশ্নের একটি বান্ডিল উধাও হওয়ার দিন টেন্ডার ছাড়াই ভাড়া করা একটি বাসে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই অরূপ। তাঁদের মধ্যেই এক জন দুই তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে মোবাইলে নিজের ছবি দেখিয়ে ‘ঘনিষ্ঠতা’র কথা বলতেন এবং নিজেদের কাজের জায়গায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতেন বলে সিপিএম সূত্রের দাবি। সেই তথ্য থেকেই বিমানবাবু তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র অভিযোগ প্রকাশ্যে এনে ফেলেছিলেন।