উপনির্বাচনের পরে যুবরাজের লক্ষ্য পুরভোট

মুকুল-হীন সংগঠন উপনির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সসম্মান উতরে দিয়েছে। কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দলের ‘যুবরাজে’র। এ বার অভিষেক-ব্রিগেডের হাত ধরেই বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে পুরভোটে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল। বনগাঁ, কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার তৃণমূল ভবন ছিল জমজমাট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

তৃণমূল ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুকুল-হীন সংগঠন উপনির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সসম্মান উতরে দিয়েছে। কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দলের ‘যুবরাজে’র। এ বার অভিষেক-ব্রিগেডের হাত ধরেই বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে পুরভোটে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল।

Advertisement

বনগাঁ, কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার তৃণমূল ভবন ছিল জমজমাট। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এখানে বসলে তাঁর কাছে যেমন বিভিন্ন এলাকার কর্মী ও নেতাদের আনাগোনা থাকত, ততটা না হলেও ভিড় জমতে শুরু করেছে আবার। দফতরে তাঁদের আগমনের মূল উদ্দেশ্য পুরভোটে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা। তার সঙ্গেই ভোট-প্রস্তুতি বিষয়ে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চাইছেন তাঁরা। দলীয় নেতৃত্বও বসে নেই। প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জেলা ও রাজ্য স্তরে কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে পুরভোটের প্রচারের রূপরেখা নিয়েও নেতারা আলোচনা করছেন। আর এই প্রক্রিয়ার পুরভাগে রয়েছেন দলনেত্রীর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, পুরভোটের আগে ব্রিগেডে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে অভিষেকদের মাথায়।

সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতা খর্বের পর থেকে অভিষেকের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে। উপনির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁরই। চাপের মুখে জোড়া উপনির্বাচনে বিপুল জয় দলের মধ্যে অভিষেকের পায়ের তলার মাটিও শক্ত করেছে। এখন নিয়ম করে তিনি তৃণমূল ভবনে আসছেন। তাঁর সঙ্গে প্রায়শই থাকছেন দলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ। পার্থবাবুর পাশে বসেই এ দিন অভিষেক জানিয়েছেন, দলনেত্রীর ‘সংগ্রামী ভাবমূর্তি’ এবং মমতা-সরকারের রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের কাজই পুরভোটের প্রচারে তাঁদের হাতিয়ার। অভিষেকের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নির্বাচনী ইস্তাহারে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে তা বাস্তবে রূপায়িত করেছেন। এটা আমরা মানুষের কাছে বলব।” সেই সঙ্গে দলের কাছে তাঁর বার্তা, “কর্মীদের উদ্দেশে বলছি, আমাদের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আরও বেশি নমনীয় এবং বিনম্র হতে হবে।” যুবরাজ যখন এই বার্তা দিচ্ছেন, তখন পাশে বসা দলের শীর্ষ নেতারা প্রায় মৌনী। অর্থাৎ মুকুল-হীন সংগঠনে ধীরে ধীরে অভিষেক-রাজ যে কায়েম হচ্ছে, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

Advertisement

মুকুল-হীন সংগঠন উপনির্বাচনের চ্যালেঞ্জ সসম্মান উতরে দিয়েছে। কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দলের ‘যুবরাজে’র। এ বার অভিষেক-ব্রিগেডের হাত ধরেই বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে পুরভোটে ঝাঁপাতে চলেছে তৃণমূল।

বনগাঁ, কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার তৃণমূল ভবন ছিল জমজমাট।

উপনির্বাচনের ফল নিয়ে অভিষেক-ব্রিগেড যথেষ্টই উজ্জীবিত। রাজ্যে এখন তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি অবশ্য মনে করছে, উপনির্বাচনের ফলে তাদের অগ্রগতির চিহ্নই স্পষ্ট। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এ দিনও দাবি করেছেন, “বিজেপি-র ভয়ে মমতা ভীত হয়ে পড়েছেন!” যার প্রেক্ষিতে পার্থবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “আমি সিদ্ধিনাথকে একটা ভূগোল ও ইতিহাসের বই কিনে দেব। উনি এ রাজ্যের ভূগোল-ইতিহাস জানেন না বলেই এমন সব মন্তব্য করছেন!” আর সিদ্ধার্থনাথকে নস্যাৎ করে যুবরাজের মন্তব্য, “আমরা তো এক নম্বরে। এখন দুই আর তিন নম্বরে কে থাকবেন, তা নিয়ে লড়াই হচ্ছে! ওঁদের নিয়ে কথা বলে লাভ নেই!”

সারদা-কাণ্ড থেকে শুরু নানা ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বের বিড়ম্বনা অবশ্য একেবারে উধাও হয়নি। মুকুলের সঙ্গে দলনেত্রীর দূরত্ব যে হারে বাড়ছে, তা নিয়েও দলে প্রবল অস্বস্তি আছে। পুরভোটের প্রচারে এ সব সামাল দেওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অভিষেকের দাবি, “মানুষ জানে, সারদা কাদের আমলে শুরু হয়। আমরা বলছি, সারদা নিয়ে তদন্ত হোক। তবে তা হোক নিরপেক্ষ।” তিনি স্পষ্ট জানাচ্ছেন, সারদা-কাণ্ডে কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হন, তবে তিনি দলের যে পদেই থাকুন না কেন, দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, যুবরাজের এই বার্তার নিশানায় কে? তবে কি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক?

মুকুলকে নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। মঞ্জুলকৃষ্ণর পথ ধরে আরও কেউ কেউ দল ছাড়তে পারেন বলেও জল্পনা শুরু হয়েছিল। যদিও উপনির্বাচনে জয়ে তা অনেকটা স্তিমিত। তিনিও কি ভাঙনের আশঙ্কা করছেন? অভিষেকের বক্তব্য, “অতীতেও দলকে ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা এ কাজ করতে গিয়েছেন, মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের অনেককেই আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই ফিরতে হয়েছে!” তৃণমূলের একাংশ বলছে, এমন তালিকায় বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও আছেন। অতীতের উদাহরণ দিয়ে যুবরাজ তবে কি মুকুলকে বার্তা দিয়ে রাখলেন?

জল্পনা হতে পারে বুঝেই পার্থবাবু সরাসরি মঞ্জুলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “উনি তো বলেছিলেন, তৃণমূলে ওঁর দমবন্ধ হয়ে আসছে!” অভিষেকও তখন বলেন, “বনগাঁর ফলে প্রমাণিত, মানুষ ওঁকে প্রত্যাখান করেছে।” মঞ্জুল যে হেতু মমতার কাছে ফেরেননি, তাই ব্যাখ্যায় জল্পনা বন্ধ হচ্ছে না!

—নিজস্ব চিত্র!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন