শাসক নিরঙ্কুশ, দ্বিতীয় বিজেপিই

মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয় স্থানের কথা বলেননি হয়তো প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয়ের বিস্তর ফারাকের কারণে! তবে বিরোধীদের ধূলিসাৎ হওয়ার বাজারেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

সাত পুরসভায় তাঁর দলের নিরঙ্কুশ জয়ের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যারা লম্ফঝম্প করছিল তৃতীয়-চতুর্থ-পঞ্চম হওয়ার জন্য, আমি দেখলাম তারা ০.১% ভোট পেয়েছে! একটা-দু’টো আসনও পায়নি!’’ শাসক দলের সাফল্যকে ‘মানুষের জয়’ বলে উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী দ্বিতীয় স্থানের কথা মুখেই আনেননি!

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয় স্থানের কথা বলেননি হয়তো প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয়ের বিস্তর ফারাকের কারণে! তবে বিরোধীদের ধূলিসাৎ হওয়ার বাজারেও দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। ওই ৭টি পুরসভার ১৪৮ এবং অন্য পুরসভার আরও দু’টি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন ধরলে মোট ১৫০ ওয়ার্ডের মধ্যে শুধু তৃণমূলই পেয়েছে ১৪২! সিপিএম এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে একটাও আসন নেই! বামফ্রন্টের শিবরাত্রির সলতে নলহাটিতে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেতা একটি আসন। আর মোট ৬টি ওয়ার্ড জিতেছে বিজেপি। তৃণমূলের জেতা অধিকাংশ ওয়ার্ডে তারাই দ্বিতীয়।

এই ফল দেখিয়ে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ভোটই যেখানে লুঠ হয়েছে, সেখানে হার-জিতের কী বিশ্লেষণ হবে?’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলছেন, ‘‘গায়ের জোরে, গুন্ডার জোরে ভোট হয়েছে। জনমতের কোনও রকম প্রতিফলনই হয়নি।’’ তবে বিজেপি যে হেতু বাম-কংগ্রেসের চেয়ে এগিয়ে, তাই দিলীপবাবু দাবি করতে পারছেন, ‘‘ঠিকমতো ভোট হলে আমরাই এক নম্বর হতাম।’’

Advertisement

আবার এর মধ্যেই ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, নলহাটিতে তাঁদের এক প্রার্থীকে সপরিবার অপহরণ করে নাম ‘তোলানো’ না হলে আরও একটি ওয়ার্ড বামেরা জিতত। বামেদের দুর্দশা প্রসঙ্গে নরেনবাবুর মত, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন না করলে আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরবে না।’’ যদিও কয়েক মাস আগে কংগ্রেসের থেকে আলাদা লড়েই কোচবিহার লোকসভা উপনির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিল ফ ব। দ্বিতীয় ছিল বিজেপি-ই।

বিরোধী নেতাদের বড় অংশই মনে করছেন, ভোট যে ভাবে হয়েছে, তাতে জয়-পরাজয়ের যুক্তিসঙ্গত কাটাছেঁড়া অসম্ভব! বিরোধীদের সামান্যতম অস্তিত্বও গুঁড়িয়ে দেওয়া যে এ বার তৃণমূলের বিশেষ লক্ষ্য ছিল, তা মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরাও। যেমন, গত বছর বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর ও হলদিয়া আসন দু’টি জিতেছিল কংগ্রেস এবং সিপিএম। দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টিতেই হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এ বার সেখানে তৃণমূল ৪৩-০ জিতে পুরবোর্ডের দখল নিয়েছে! আবার হলদিয়ায় তৃণমূলের পক্ষে ফল ২৯-০। কেমন হয়েছে ভোট? ধরা যাক হলদিয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে ৩৭৫১টি ভোট পড়েছে, যার মধ্যে তৃণমূলই পেয়েছে ৩৫৮৪! সিপিএম প্রার্থী তথা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল পেয়েছেন ১০১ ভোট। যিনি নিজে ভোটও দিতে পারেননি।

ভোট যে লুঠ হয়েছে, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিধানসভার মধ্যে সুজনবাবুর এই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করেননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, যে বার কলকাতার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনিও দেখেছিলেন কী ভাবে ভোট লুঠ হয়েছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন