Anubrata Mondal

বয়ান-ত্রিফলার মুখে কেষ্ট

গরু পাচারের মামলায় জেলে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে তদন্তকারীরা আদালতে যে-আবেদন করেছিলেন, গত শুক্রবার বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ০৫:০৭
Share:

গরু পাচারের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

‘স্ট্র্যাটেজি’ বা কৌশল চূড়ান্ত হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের খবর, শনিবারেই দিল্লি ও কলকাতার তদন্তকারী অফিসারদের নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে গরু পাচারের মামলায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের ছক তৈরি করা হয়েছে। ছকটি কী, তা পুরোপুরি স্পষ্ট না-হলেও এটা জানা গিয়েছে যে, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইডি-র হাতিয়ার মূলত তিনটি বয়ান। সেই তিন বয়ানের একটি তাঁরই মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের। অন্য দু’টি বয়ান অনুব্রত বা কেষ্টর বহু দিনের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন এবং কেষ্টরই হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারির। তিনটি বয়ানই অনুব্রতের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অফিসারদের দাবি।

Advertisement

সিবিআইয়ের মামলায় অনুব্রত এখন আসানসোল জেলে আছেন। চলতি সপ্তাহেই সেখানে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি চলছে ইডি শিবিরে। গরু পাচারের মামলায় জেলে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চেয়ে তদন্তকারীরা আদালতে যে-আবেদন করেছিলেন, গত শুক্রবার বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।

অনুব্রতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ছক কষতে শনিবার দিল্লি ও কলকাতার তদন্তকারীদের নিয়ে সমন্বয় বৈঠকের সপ্তাহ তিনেক আগে সেহগালকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করেছে ইডি। সম্প্রতি অনুব্রত-কন্যা সুকন্যাকেও দিল্লিতে ডেকে তিন দিনে প্রায় ২২ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দিল্লির অফিসে অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা আর হিসাবরক্ষক মণীশকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি-র অফিসারেরা।

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, সুকন্যা-সহ ওই তিন জনের বয়ান গরু পাচারে অনুব্রতের সক্রিয় ভূমিকাকে আরও মান্যতা দিয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মণ্ডল পরিবারের কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক আমানত এবং আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির হিসাবের বিষয়ে মণীশও কোনওপ্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। তদন্তকারীদের বক্তব্য, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বয়ানেও অসংলগ্নতা রয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৫ সালের পর থেকে অনুব্রত, সুকন্যা এবং কেষ্টর প্রয়াত স্ত্রীর ব্যাঙ্ক আমানত ও আয়ের সঙ্গে সম্পত্তি বেড়েছে রকেটের গতিতে। এমনকি কনস্টেবল পদমর্যাদার সেহগালেরও বিপুল সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে, যার সঙ্গে তাঁর আয়ের কোনও সামঞ্জস্য নেই। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গরু পাচারের লভ্যাংশের মোটা অংশ বিভিন্ন ব্যবসা ও সম্পত্তিতে নামে-বেনামে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পাচারের কালো টাকা সাদা করার নানা সূত্র তদন্তে উঠে এসেছে। ইডি-র দাবি, বীরভূমের পাচার চক্রের কোটি কোটি টাকা কলকাতায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছেও পৌঁছেছে বলেও সেহগাল-সহ অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের অভিযোগ, অনুব্রতই পাচার চক্রের ‘কেন্দ্রীয় ব্যক্তি’।

অনব্রত গরু পাচার চক্র চালানোর জন্য সেহগালের মাধ্যমেই পুলিশ-প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করতেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। অভিযোগ, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে গরু পাচারের ভাগের টাকা পৌঁছে দিতে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্তাদের একাংশ ও নিচু তলার বেশ কিছু পুলিশ অফিসারকে কাজে লাগানো হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন