ঘুমন্ত কিশোরীর মুখে অ্যাসিড, ধৃত

মন দিয়ে এখন মাধ্যমিকের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল তার। বদলে অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে সে। বিবাহিত যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় রবিবার গভীর রাতে সবংয়ের ওই বছর ষোলোর কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সবং শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৯
Share:

মন দিয়ে এখন মাধ্যমিকের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল তার। বদলে অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে সে। বিবাহিত যুবকের বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় রবিবার গভীর রাতে সবংয়ের ওই বছর ষোলোর কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দিগ্বিজয় সিংহই ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিশোরীর জেঠুর অভিযোগের ভিত্তিতে বছর তিরিশের দিগ্বিজয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

কড়া সাজা, খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি রুখতে অভিযান— কোনও কিছুতেই রাশ টানা যাচ্ছে না অ্যাসিড হামলায়। কখনও প্রেমের প্রস্তাবে নারাজ তরুণীকে শিক্ষা দিতে, কখনও বা স্বামীর সঙ্গে অশান্তির জেরে অ্যাসিড হামলার শিকার হচ্ছেন মহিলারা। পশ্চিম মেদিনীপুরেও এমন গুচ্ছ গুচ্ছ ঘটনা ঘটছে। গত শুক্রবার সালিশি নিয়ে গোলমালের জেরে এক প্রৌঢ়কে মারধরের পর দু’চোখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার ঘটনায় সাত জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় ঘাটাল আদালত। ওই রাতেই আবার জেলার চন্দ্রকোনায় বধূ নির্যাতনের মামলা না তোলায় এক মহিলার উপর অ্যাসিড হানার অভিযোগে ধরা পড়ে স্বামী-ভাসুর।

সবংয়ের ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েকদিন আগে। ওই কিশোরীর বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। সামান্য জমিতে চাষ করে কোনওমতে চলে সংসার। চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসারে কিশোরী সেজ। বছর তিনেক আগে কিশোরীর মা প্রতিবেশী দিগ্বিজয়ের থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। ধারের বেশিরভাগটা তিনি শোধও করে দেন। অভিযোগ, বাকি টাকা চেয়ে প্রায়ই তাগাদা দিত দিগ্বিজয়। দু’একবার ঝামেলাও হয়। এ সবের মধ্যেই বছর খানেক আগে থেকেই কিশোরীকে দিগ্বিজয় উত্যক্ত করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। বারকয়েক বিয়ের প্রস্তাবও দেয়।

Advertisement

রবিবার রাতে বাড়ির বাইরের ঘরে বাবা-মা-ভাইবোনের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ, মাঝরাতে হঠাৎ মুখে অসহ্য জ্বালা শুরু হওয়ায় চেঁচিয়ে ওঠে সে। ঘুম ভেঙে দেখে, কেউ তার মুখে ঝাঁঝালো তরল ঢেলে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে টর্চ জ্বেলেও ঘরে কাউকে দেখতে পাননি কিশোরীর বাবা। জখম কিশোরীকে সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিজনেরা।

হাসপাতালের শয্যায় শুনে আক্রান্ত ওই কিশোরী বলে, “১২ ফেব্রুয়ারি ওই যুবক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও রাজি হইনি। তখনই গলা টিপে হুমকি দিয়েছিল, দশদিনের মধ্যে প্রাণে মেরে দেবে। তাই দেখতে না পেলেও আমি নিশ্চিত, দিগ্বিজয়ই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” চিকিৎসকেরা জানান, অ্যাসিডে ওই কিশোরীর ঠোঁটের চারপাশের কিছুটা ঝলসে গিয়েছে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষ কাণ্ডার বলেন, “বাথরুম সাফাইয়ের মিউরেটিক অ্যাসিডেই ওই ক্ষত বলে অনুমান। তবে মেয়েটির অবস্থা স্থিতিশীল।”

যদিও স্বামী নির্দোষ বলে দাবি করছেন দিগ্বিজয়ের স্ত্রী আশালতা সিংহ। তিনি বলছেন, ‘‘বকেয়া টাকা ফেরত চেয়ে স্বামী ওদের ফোন করত ঠিকই। তবে অ্যাসিড হানার কথা ঠিক নয়। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটি একটু সুস্থ হলে আমরা তার সঙ্গেও কথা বলব।’’

কাল, বুধবার থেকেই শুরু মাধ্যমিক পরীক্ষা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে মেয়ের এমন পরিণতিতে ভেঙে পড়েছেন কিশোরীর মা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দিগ্বিজয়ের সব টাকাই শোধ করে দিয়েছিলাম। তারপরেও ও অকারণ ঝামেলা করছিল। নানা ছলে আমার মেয়েকে বিয়ের ছক কষছিল।’’ ওই কিশোরী অবশ্য সব যন্ত্রণা দূরে সরিয়ে মাধ্যমিককেই পাখির চোখ করছে। দৃঢ় স্বরে বলছে, ‘‘হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে চাই। তার ব্যবস্থা করা হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন