ফের সক্রিয় বুদ্ধ, বন্‌ধ তুলেই নিল সিপিএম

প্রতিরোধের ডাক দিয়েও ভোটের দিন কিছুই করা যায়নি! একতরফা দাপিয়ে বেড়িয়েছে শাসক দলের বাহিনী। তার পরে আবার বন্‌ধ! দল এবং বামফ্রন্টের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত আজ, সোমবারের বিধাননগর-রাজারহাট বন্‌ধ তুলে নিল সিপিএম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৮
Share:

প্রতিরোধের ডাক দিয়েও ভোটের দিন কিছুই করা যায়নি! একতরফা দাপিয়ে বেড়িয়েছে শাসক দলের বাহিনী। তার পরে আবার বন্‌ধ! দল এবং বামফ্রন্টের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত আজ, সোমবারের বিধাননগর-রাজারহাট বন্‌ধ তুলে নিল সিপিএম।

Advertisement

জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে বন্‌ধ থেকে দলকে নিরস্ত করতে এ বারও সিপিএমের অন্দরে সক্রিয় হলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একে তো নিজেদের শক্তির সীমাবদ্ধতা যাচাই না করেই ভোটের আগে বড় বড় হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম নেতৃত্বের উপরে সন্তুষ্ট ছিলেন না বুদ্ধবাবু। ভোটে রাস্তায় নেমে লড়তে না পারার পরে আবার বন্‌ধের ডাকে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। আলিমুদ্দিনে রবিবার সকালেই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব বুঝিয়ে দেন, বিধাননগরে বন্‌ধের ডাক একটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া মাত্র। প্রতিবাদের এই ধরনকে তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু এক বার ডাক দেওয়ার পরে বন্‌ধ তুলে নেওয়া হবে কী ভাবে, তা নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। বিরোধীদের চাপের মুখে সন্ধ্যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় যখন জানালেন বুধবারের ভোট-গণনা স্থগিত, তখনই মুখরক্ষার উপায় হাতে পেয়ে গেলেন তাঁরা! শেষ পর্যন্ত রাতে বিবৃতি দিয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব জানিয়ে দিলেন, বিধাননগরে আজ বন্‌ধ হচ্ছে না।

বস্তুত, সাংগঠনিক শক্তির পরোয়া না করে গৌতমবাবুর অতিরিক্ত হাঁকডাকে সিপিএম এবং বামফ্রন্টের অন্দরেও অনেকে বিরক্ত। বিধাননগরের ভোট নিয়েও তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, চার হাজার ছেলে তৈরি থাকবে তৃণমূলের বাইক বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য। বহিরাগতদের বাইক ধরে ধরে কেষ্টপুর ও বাগজোলা খালে ফেলা হবে! কিন্তু কার্যক্ষেত্রে চার হাজার কেন, চারশো ছেলেকেও ওই কাজ করতে ময়দানে দেখা যায়নি! তার উপরে একতরফা ভোট চলাকালীনই গৌতমবাবু বিধাননগর পুর-এলাকায় আজ বন্‌ধের ডাক দিয়েছিলেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ দিন সুযোগ পেয়ে ফ ব নেতৃত্ব এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বৈঠকে তখন বুদ্ধবাবু ছাড়াও হাজির ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, দলের পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য মহম্মদ সেলিম ও কৃষক সভার নেতা মদন ঘোষ। তাঁরা বুঝিয়ে দেন, ভোটের দিন তৃণমূলের তাণ্ডবের মুখে বড় কোনও প্রতিবাদে যাওয়ার জন্য কর্মী মহল থেকে চাপ আসছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো স্থানীয় এলাকায় বন্‌ধের ঘোষণা করা হয়েছিল। বুদ্ধবাবুও ইঙ্গিত দেন, বন্‌ধ ডাকা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামানোর কিছু নেই।

Advertisement

পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে গৌতমবাবু বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘গণনা স্থগিত রাখার যখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর পরে নতুন করে ভোটের আশাও থাকছে। এই পরিস্থিতিতে বিধাননগর পুর-এলাকায় সোমবারের ১২ ঘণ্টা বন্‌ধ স্থগিত রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ঠিক সময়ে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বড় সংঘাতে যাব’।

সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গে অশোক ভট্টাচার্য যেখানে সামনে থেকে প্রতিটা লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা নেতৃত্ব সেখানে বারবার মুখে অনেক কিছু বলেও কাজে কিছুই করতে পারছেন না! তবে ফ ব নেতা বরুণ মুখোপাধ্যায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়, হাফিজ আলম সৈরানিদের এ দিন বুদ্ধবাবুরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁতের পরিকল্পনা নেই। তাঁরা আপাতত মনোনিবেশ করতে চান ঝান্ডা না দেখে সব মতের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলায়। যে কাজ বিধাননগরে অধরাই থেকে গিয়েছে এ বার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন