Abhishek Banerjee Adhir Chowdhury Md Salim

দিল্লিতে ‘বঞ্চিত’ বঙ্গবাসীর প্রতিনিধি কি এখন তৃণমূল তথা অভিষেক? কী বলছে ‘ইন্ডিয়াসঙ্গী’ কংগ্রেস-বাম?

বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূলের আন্দোলনকে বাংলার প্রেক্ষিতে কী ভাবে দেখছে কংগ্রেস, সিপিএম? দিল্লিতে বাংলার ‘বঞ্চিত’ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূল প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩৪
Share:

(বাঁ দিক থেকে) অধীর চৌধুরী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

মঙ্গলবার দিনভর তৃণমূলের ‘মেগা শো’ দেখেছে রাজধানী দিল্লি। জাতীয় রাজনীতির উঠোনে বিরোধী রাজনীতির ‘আগ্রাসী’ মেজাজ দেখিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূলের এই আন্দোলনকে বাংলার প্রেক্ষিতে কী ভাবে দেখছে কংগ্রেস এবং সিপিএম? অমিত শাহের পুলিশ অভিষেকদের টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অধীর চৌধুরী বা মহম্মদ সেলিমরা কি মনে করছেন, দিল্লির দরবারে বাংলার ‘বঞ্চিত’ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূল প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল?

Advertisement

বুধবার সকালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের প্রতি সুর ‘নরম’ করার প্রশ্ন নেই। অধীর যা-ও বা তুলনামূলক আলোচনা করে তৃণমূলকে বিঁধতে চেয়েছেন, সেলিম কার্যত স্ট্রেট ব্যাটে খেলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইনকে অধীর বলেন, ‘‘আন্দোলন করার অধিকার সকলের আছে। বাংলাতেও আছে। দিল্লিতেও আছে। বাংলায় কি নবান্নে যেতে দেওয়া হয়? তখন তো মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ! দিল্লিতে তো হাসপাতালে পাঠিয়েছে বলে শুনিনি।’’ আর সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য সেলিমের কথায়, ‘‘বাংলায় মুখ হিসাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী ফেল করার পরে অভিষেককে কাল্টিভেট করা শুরু করেছে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। মঙ্গলবার দিল্লিতে যা হয়েছে, তা আসলে বিজেপির বেঁধে দেওয়া মঞ্চে তৃণমূলের সাজানো নাটক।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘যন্তরমন্তরে বাম কৃষক সংগঠনগুলির কালা দিবসের কর্মসূচি করার কথা ছিল। তা বাতিল করে তৃণমূলকে প্রচারের আলোয় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের দফতর, সাংবাদিক ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষের বাড়িতে হানা দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তাঁদের আটক করেছে। গ্রেফতার করেছে।’’

Advertisement

অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের এই দিল্লি অভিযানের মূল দাবি ছিল ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় বাংলার বকেয়া আদায়। সোমবার, ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে মৌনী ধর্নায় বসে তৃণমূল। তার পর অভিষেকের সাংবাদিক সম্মেলনের সময়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে তাদের একপ্রস্ত সংঘাত হয়। সোমবারই আভাস মিলেছিল মঙ্গলবার কী হতে পারে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন প্রথমে যন্তর মন্তরে ধর্না-অবস্থান করে তৃণমূল। তার পর অভিষেকের নেতৃত্বে ৪০ জনের প্রতিনিধি দল যায় কৃষি ভবনে। তৃণমূলের অভিযোগ, সময় দিয়েও তাঁদের বসিয়ে রেখে পিছনের দরজা দিয়ে দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যান কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী প্রজ্ঞা নিরঞ্জন। এর পর তৃণমূল কৃষি ভবনে অবস্থান শুরু করলে তাঁদের টেনেহিঁচড়ে, চ্যাংদোলা করে আটক করে বাসে তুলে থানায় নিয়ে যায় দিল্লি পুলিশ।

পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সেলিমের বক্তব্য, ‘‘এক জন সাংসদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে পারেন। সেখানে এক জন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য এত কিছু? তৃণমূল সামনে যেটা করেছে, তার নেপথ্য কারিগর বিজেপি।’’ অধীরের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘দাবি সময়োপযোগী। কারণ সামনে লোকসভা ভোট রয়েছে।’’ কিন্তু পাশাপাশিই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদের বক্তব্য, ‘‘বকেয়া টাকা নিয়ে যত কথা শুনছি, ১০০ দিনের কাজে বাটপাড় নিয়ে কিন্তু তত কথা শুনছি না। আমার আরও একটা বিষয় মাথায় ঢুকছে না। তদন্ত রুখতে কথায় কথায় কোর্টে যায় তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে তারা কেন আদালতে যাচ্ছে না?’’

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ জানিয়েছেন, বাংলায় ১০০ দিনের কাজে যে পরিমাণ ‘অনিয়ম’ হয়েছে, তাতে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত। অভিষেকও বলেছেন, দুর্নীতির তদন্ত হোক। কিন্তু ২০ জনের জন্য কেন আড়াই কোটি মানুষের পেটে লাথি মারা হচ্ছে?

তবে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এ নিয়েও তৃণমূল-বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানিয়েছেন। সেলিম বলেন, ‘‘গিরিরাজ সিংহ এখন বলছেন, সিবিআই চাই। দু’বছর ধরে কী করছিলেন? সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প তত্ত্বাবধান করার জন্য দেশের সব জেলায় মনিটরিং কমিটি রয়েছে। তার চেয়ারম্যান হন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রবীণ সাংসদ। ২০১৫-’১৬ সাল থেকে রাজ্যে সেই কমিটির কার্যকলাপ বন্ধ। আমি, অধীর তখন বার বার সংসদে বলেছিলাম। কান দেয়নি।’’ তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল ভুয়ো জব কার্ডের টাকাও পাওনা বলে দাবি করছে। নিজেদের পকেট ভরাতে গরিব মানুষের রুটিরুজিতে সঙ্কট তৈরি করতে চাইছে। সেলিমের কথায়, ‘‘১০০ দিনের কাজে থার্ড পার্টি হিসাবে অনেক এনজিও কাজ করে। বাংলায় মূলত যারা কাজ করে, তারা উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের এনজিও। তাদের পিছনে রয়েছে আরএসএস। তারা চুরি আটকাতে কী করেছে? আমরা তো বলেছি, গ্রামীণ মানুষের রুটিরুজিতে আঘাত হানা অন্যায়। রাজ্যের কাছে দাবি করেছি, কত কর্মদিবস, কত শ্রমিক, কত মজুরি, কত বকেয়া— এই সব মিলিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। আমরা রাজ্যের পাওনার দাবিতে লড়াই করব। আমরা দাবি করেছিলাম সর্বদলীয় বৈঠকের। কিন্তু কিচ্ছু হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন