দল ভাঙানো

জেলাশাসক, এসপি-র দিকে আঙুল অধীরের

দল ভাঙানো নিয়ে শাসক ও বিরোধী চাপানউতোর চলছিলই। এ বার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে আসার পরে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ও পুরসভার বিরোধী দলের সদস্যদের তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৮
Share:

অধীর চৌধুরী

দল ভাঙানো নিয়ে শাসক ও বিরোধী চাপানউতোর চলছিলই। এ বার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

Advertisement

দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে আসার পরে জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত ও পুরসভার বিরোধী দলের সদস্যদের তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। বিরোধীদের হাতছাড়া হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি বা পুরসভার বোর্ড। বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ করে এসেছে, ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে দল ভাঙাচ্ছে তৃণমূল। এ বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সরাসরি অভিযোগ, শাসক দলের মদতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা বিরোধীদের দল ভাঙাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন! তাঁর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গের দু’টি জেলার নির্দিষ্ট ভাবে উদাহরণও দিয়েছেন অধীর। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

বিধান ভবনে রবিবার দলের কলকাতার জেলা কমিটিগুলিকে নিয়ে বৈঠকের পরে অধীর বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা দল ভাঙাচ্ছেন। জেলা পরিষদ ভাঙানোর জন্য বৈঠক করে বলা হচ্ছে, দল ছেড়ে শাসক দলে চলে গেলে বকেয়া তহবিলের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। তার ৫০% খরচ করলেই চলবে। বাকিটা নিজেদের মতো কাজে লাগানো যাবে!’’ অধীরের দাবি, পঞ্চায়েত সদস্যদের জন্য চার থেকে পাঁচ লক্ষ, পুরসভার কাউন্সিলরদের জন্য ২০ লক্ষ এবং জেলা পরিষদ সদস্যদের জন্য ১০ কোটি টাকা ইনাম দেওয়া হচ্ছে দল বদলানোর জন্য! তিনটে ক্ষেত্রেই সঙ্গে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে একটি করে চাকরির। এই চাপ এবং প্রলোভনের কাছেই বিরোধী শিবিরের বহু জনপ্রতিনিধি আত্মসমর্পণ করছেন বলে প্রদেশ নেতৃত্বের বক্তব্য।

Advertisement

এমন অভিযোগকে অবশ্য ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অধীরবাবু স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি, কংগ্রেসের দুর্গে দল এ ভাবে ভেঙে যাবে। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, ভাঙন দ্রুত হচ্ছে! তাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ সব বলছেন!’’ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির পুলিশ সুপার বা জেলাশাসকেরা কেউ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেননি।

এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বিরোধী ভাঙিয়ে পুরসভা শাসক দলের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অভিযোগ উঠেছিল পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এ দিন যে কয়েকটি জেলার কথা বলেছেন, সেখানে কংগ্রেসের সাংগঠনিক অস্তিত্ব এখনও অনস্বীকার্য। অধীরের নিজের জেলায় সম্প্রতি তিনটি পুরসভার দখল নিয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের তরফে ওই জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদেও ক্ষমতায় চলে আসবে তৃণমূল! তার লাগোয়া আর একটি জেলায় বিধানসভা ভোটে জোড়া ফুলের বিরাট সাফল্যের বাজারেও একটি আসনও জিততে পারেনি তৃণমূল। আরও একটি জেলায় কংগ্রেসের হাত থেকে একটি পুরসভা সদ্য ছিনিয়ে নিয়েছে শাসক দল। তবে তৃণমূল পাল্টা বলছে, উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে যোগ দিতেই বিরোধীরা স্বেচ্ছায় দল বদলাচ্ছেন!

শুধু কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্যই নয়, বিধানসভা ভোটের কয়েক মাসের মধ্যে বিরোধী শিবিরের দুই বিধায়কও তৃণমূলের মঞ্চে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে অধীর এ দিন বলেছেন, ‘‘আমাদের এক জন বিধায়কই দল ছেড়েছেন। ওঁর এলাকায় গিয়ে আমরা সভা করব। মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব, এমন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁদের কাছে আবেদন করেছিলাম বলে!’’

এই টানাপড়েনের মাঝেই কাল, মঙ্গলবার ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠানে মূল বক্তা মানস ভুঁইয়া। প্রধান অতিথি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে অন্য ইঙ্গিত আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অধীর দেবপ্রসাদবাবুকে প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য করতে চাননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement