তথ্য লোপাট করছে তৃণমূল, সরব অধীর

পুলিশ-প্রশাসনের বাধায় এ ক’দিন বিস্ফোরণের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্টের রাজ্য চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সকলেই ঘুরে গিয়েছেন। তবে মিছিল বা সভা হয়নি। সোমবার সেই ছবিটা বদলাল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও জেলার বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে মিছিল হল পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পিংলা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

ম্যাটাডোরে দাঁড়িয়েই সভা করলেন অধীর চৌধুরী, মানস ভুঁইয়ারা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

পুলিশ-প্রশাসনের বাধায় এ ক’দিন বিস্ফোরণের গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামফ্রন্টের রাজ্য চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সকলেই ঘুরে গিয়েছেন। তবে মিছিল বা সভা হয়নি।
সোমবার সেই ছবিটা বদলাল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও জেলার বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে মিছিল হল পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই এ দিন সবং, পিংলা ও ডেবরা থেকে আসা কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের মিছিল মণ্ডলবাড় থেকে শুরু হয়। ব্রাহ্মণবাড় ময়দানে এসে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙেই বিস্ফোরণস্থল পর্যন্ত মিছিল হয়। ঘটনার পরে গ্রামে এ দিনই প্রথম সভাও করে কংগ্রেস। সেখানে অধীরবাবু অভিযোগ করেন, এনআইএ তদন্তের আগেই তৃণমূল সরকার তথ্য প্রমাণ লোপাট করছে।

Advertisement

গত ৬ মে রাতে এই ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২জনের। অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতির উদ্যোগেই বাজির আড়ালে চলছিল বোমা তৈরির কারবার। ঘটনার পরে রঞ্জন গ্রেফতার হন। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পিংলা বিস্ফোরণের তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। গত শনিবার ব্রাহ্মণবাড়ে রঞ্জনের বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়েছে। সে দিনই ২টি জেসিবি (মাটি কাটার যন্ত্র) চালিয়ে বিস্ফোরণস্থল পরিষ্কার করা হয়। শনিবার দিনভর শোনা গিয়েছিল, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ ব্রাহ্মণবাড়ে যেতে পারে। এনআইএ-র প্রতিনিধিরা কলকাতায় সিআইডি-র কাছ থেকে বিস্ফোরণ নিয়ে রিপোর্টও সংগ্রহ করেন। তবে তাঁরা আর গ্রামে যাননি।

ওই দিন থেকেই অভিযোগ উঠেছে, এনআইএ আসার সম্ভাবনা তৈরি হতেই পুলিশ রাতারাতি বিস্ফোরণস্থল পরিষ্কার করে দিয়েছে। এ দিন বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরবাবুর কাছেও স্থানীয় সন্ধ্যা হেমব্রম, রাসমণি টুডুরা অভিযোগ করেন, তথ্য প্রমাণ লোপাট করতেই মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে বিস্ফোরণস্থল একেবারে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসী গীতা প্রধান, ঝর্না মান্ডিরা আরও বলেন, “আমরা আতঙ্কে রয়েছি। রঞ্জন মাইতিরা আমাদের কাউকে ছাড়বে না বলে ফেরিওয়ালারা এসে হুমকি দিচ্ছে। রঞ্জনদের বাকি ছ’ভাইকে গ্রেফতার করতে হবে।”

Advertisement

তথ্য প্রমাণের অভিযোগ তুলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও বলেন, “খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে তৃণমূল সরকার ধামাচাপা দিতে সব বোমা ফাটিয়ে দিয়েছিল। তবু সব সত্যি সামনে এসেছিল। কারণ, তথ্য লোপাটের আগেই এনআইএ চলে এসেছিল। এ বার তাই তৃণমূল সরকার এনআইএ আসার আগেই প্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে।” এ দিন সাংবাদিকদের সামনে ক্ষতিপূরণ নিয়েও কটাক্ষ করেন অধীরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল সরকার মদ খেয়ে মারা গেলে টাকা দিচ্ছে, ধর্ষণে টাকা দিচ্ছে, বোমা বিস্ফোরণে টাকা দিচ্ছে। আসলে সাধারণ মানুষের জীবনের মর্যাদা এই সরকার দিতে চাইছে না।”

পাশে আছি

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সোমবার পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে মিছিল-সভা করল কংগ্রেস। ছিলেন অধীর চৌধুরী এবং মানস ভুঁইয়া। অধীরের অভিযোগ,

প্রমাণ লোপাটে বিস্ফোরণস্থল পরিষ্কার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি সিআইডির নির্দেশে বিস্ফোরণস্থল পরিষ্কার করা হয়েছে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

পিংলার কারখানায় যে সব নাবালকের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা অধীরবাবুর জেলারই সুতির বাসিন্দা। মুর্শিদাবাদের শিশু শ্রমিকদের বাজি কারখানায় কাজ করানোরও সমালোচনা করেন সাংসদ অধীরবাবু। এ দিন কংগ্রেসের মিছিল ব্রাহ্মণবাড় ময়দানে পৌঁছতেই পথ আটকায় পুলিশ। জানিয়ে দেওয়া হয়, শুধু কংগ্রেসের কয়েকজন প্রতিনিধি বিস্ফোরণস্থলে যেতে পারবেন। সেই বাধা উপেক্ষা করেই অবশ্য মিছিল এগোয়। পরে ব্রাহ্মণবাড় ময়দানে ফিরে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই পিক-আপ ভ্যানে দাঁড়িয়ে মাইক হাতে সভা করেন কংগ্রেস নেতারা। অধীর বলেন, “মা-মাটি মানুষের সরকারের সময়ে মানুষের রুটি-রুজির জন্য বোমা কারখানা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, বোমা বিস্ফোরণ, থা থেকে থানায় ঢুকে পুলিশ পেটানো, সেবেতেই জড়াচ্ছে তৃণমূল। দিদি বলেছে সারা বাংলার দুষ্কৃতী এক হও। তাই আপনারা সাবধান হন।” এ দিন মানসবাবুও পুলিশ-প্রশাসনকে বিঁধে বলেন, “জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ দাবি করেন তিনি জঙ্গলমহল শান্ত করেছেন। তবে কেন তিনি তৃণমূলের দুষ্কৃতী ও বারুদের স্তূপের মোকাবিলা করতে পারছেন না। এটা কি শাসকদলের কাছে দায়বদ্ধতা!”

ঘটনার ১২ দিন পরে কেন কংগ্রেস নেতৃত্ব গ্রামে এসেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অধীরবাবু। তিনি বলেন, “এখানে ভোট চাইতে বা ছাপ্পা দিতে আসিনি। মুর্শিদাবাদে গিয়ে তৃণমূল সরকার মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে এল। কিন্তু এখানকার মা বোনেরা বলছেন, তাঁদের ঘর পুড়লেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হল না। তাই ঘরপোড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে আমরা এসেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন