শবরদের গ্রামে তিনশো বাড়ি, পানীয় জল

লোধা-শবরদের জন্য নতুন তিনশোটি বাড়ি তৈরি হবে ঝাড়গ্রাম জেলায়। বাংলা আবাস যোজনায় তৈরি হবে ওই সব বাড়ি। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পে তৈরি লোধা-শবরদের পুরনো বাড়িগুলিও সংস্কার করা হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২২
Share:

— ফাইল চিত্র।

লোধা-শবরদের জন্য নতুন তিনশোটি বাড়ি তৈরি হবে ঝাড়গ্রাম জেলায়। বাংলা আবাস যোজনায় তৈরি হবে ওই সব বাড়ি। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পে তৈরি লোধা-শবরদের পুরনো বাড়িগুলিও সংস্কার করা হবে। লোধা-শবরদের গ্রামে হবে নতুন পরিস্রুত পানীয় জলের প্রকল্প। লোধা-শবরদের বিকল্প জীবিকা ও সারা বছরের কর্মসংস্থানের জন্য নেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি।

Advertisement

শবর-লোধাদের সার্বিক উন্নতির লক্ষে ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য ১০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে খবর, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন শবরদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা-ভিত্তিক উন্নয়ন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শবর পল্লিগুলির সার্বিক অবস্থা ও প্রয়োজন সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেছিল নবান্ন। সূত্রে খবর, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে শবরদের বাড়ি, পানীয় জল ও জীবিকার বন্দোবস্তের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একেবারেই যাদের আস্তানার অবস্থা খারাপ এমন তিনশোটি পরিবারকে প্রথম পর্যায়ে বাংলা আবাস যোজনায় নতুন বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে একশোটি পুরনো বাড়ি সংস্কার করা হবে। বাংলা আবাস যোজনায় বাড়িগুলি তৈরি ও সংস্কারের কাজ হবে জেলা পরিষদের মাধ্যমে। শবর গ্রামগুলিতে ৫০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানীয় জল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। আরও ৫০টি পুরনো ও অকেজো পানীয় জল প্রকল্পগুলি সারানোর জন্য দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

ঝাড়গ্রাম জেলায় আদিম উপজাতি লোধা-শবরদের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। কিন্তু পরম্পরাগত ভাবে লোধা-শবর জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ জঙ্গলের শুকনো ডালপাতা, ভেষজ, শালগাছের ধুনোর মতো নানা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করেন। সেগুলি বিক্রি করে দিনগুজরান করেন তাঁরা। এ ছাড়া দিনমজুরিও করেন অনেকে। একশো দিনের কাজে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মজুরির টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়তে কিছু সময় লাগে। তাই ওই কাজে আগ্রহী হন না শবররা। প্রায় দেড় দশক আগে বাম জমানায় বেলপাহাড়ির আমলাশোলে অপুষ্টিতে চার শবর-সহ ৫জনের মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। কিন্তু ওই সময় আমলাশোল ছিল নিতান্তই দুর্গম। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে আমলাশোলে যাওয়ার রাস্তা, পরিস্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত, লোধা-শবরদের বাড়ি-সহ নানা ধরনের উন্নয়ন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে লোধা গ্রামগুলির নজরদারিতে খামতি থেকে গিয়েছিল বলে অভিযোগ লোধা-শবর সংগঠনের।

Advertisement

আরও পড়ুন: হাওড়ার গ্রামে অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ফসল বিমার টাকাই, জানা গেল তদন্তে

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে শবরদের মাশরুম চাষ, উদ্যানপালন, প্রাণিপালনের মতো অর্থকরী ব্যবস্থায় আগ্রহী করে তোলার জন্য নিবিড় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দু’শোটি শবর-লোধা স্বনির্ভর দলকে প্রাণী পালনের জন্য দু’কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি স্বনির্ভর দলকে প্রাণী পালনের জন্য দেওয়া হবে ১ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও আরও ৩০০টি স্বনির্ভর দলের মাধ্যমে জমির উন্নয়ন, কৃষি ও উদ্যান পালনের পাশপাশি, বাবুই দড়ি ও শালপাতার থালা তৈরির ব্যবস্থা করে দিয়ে জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার শবর-লোধাদের সার্বিক উন্নতির জন্য বিশেষ বরাদ্দ মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার। দ্রুত কাজগুলি শুরু হবে।’’ মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, ‘‘বাম জমানায় লোধাদের জন্য বহু টাকা বরাদ্দ হলেও বাস্তবে কোনও কাজ হয়নি। তাই এবার উন্নয়নের কাজে লোধা সংগঠনের প্রতিনিধিদের রেখে কাজ হলে ভাল হয়।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন