গবাদি পশু নিয়ে নয়া বিধি কি মানবে রাজ্য

প্রশাসনের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বিধি ও তার প্রয়োগ নিয়ে এখনও সবিস্তার চর্চা হয়নি। আগামী সপ্তাহে প্রাণিসম্পদ বিকাশ, পরিবেশ দফতরকে নিয়ে এই বিষয়ে নীতি ঠিক করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০৩:৫৪
Share:

চাষবাস ছাড়া অন্য কারণে গবাদি পশুর বিক্রি বন্ধ করতে বিধি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। সেই বিধি মানতে বাধ্য হলে এ রাজ্যে গরু, মোষের বিক্রিবাটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। বন্ধ হতে পারে রাজ্যের কয়েকশো ছোট-বড় গরুর হাট। লাটে উঠতে পারে কসাইখানাগুলিও। বিপুল ধাক্কা লাগবে চর্মশিল্পেও। সব মিলিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কি এই কেন্দ্রীয় বিধি মেনে নেবে?

Advertisement

প্রশাসনের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বিধি ও তার প্রয়োগ নিয়ে এখনও সবিস্তার চর্চা হয়নি। আগামী সপ্তাহে প্রাণিসম্পদ বিকাশ, পরিবেশ দফতরকে নিয়ে এই বিষয়ে নীতি ঠিক করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি হাতে এলে এই নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে সব রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্র এই পদক্ষেপ করতে পারত।’’ রাজ্যের এক কর্তা জানান, আইন মানতে বাধ্য করা হলে প্রয়োজনে মামলার পথও খোলা রাখা হচ্ছে।

প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, খাদ্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। সেই হিসেবে গবাদি পশুর কেনাবেচা বা গোমাংস উৎপাদন ও তার রফতানি নিয়ে কেন্দ্রের কিছু বলার থাকতে পারে না। তাই কেন্দ্রের বিধির কোনও প্রভাবও রাজ্যের উপর পড়ার কথা নয়।

Advertisement

কিন্তু রাজ্যের অফিসারেরাই জানাচ্ছেন, শুক্রবার কেন্দ্রের হয়ে বিধি জারি করেছে পরিবেশ মন্ত্রক। এবং এই বিধি তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় আইনের একটি বিধি সংশোধন করেই। ২০০১ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় ‘প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যাল অ্যাক্ট’-এ যে নতুন বিধি তৈরি হয়, সেখানেই সংশোধন করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রক। নতুন বিধির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যাল (রেগুলেশন অফ লাইভস্টক মার্কেট), ২০১৭। যে হেতু এই সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনটি সারা দেশে কার্যকর, ফলে তার কোনও সংশোধন হলে সেটাও সব রাজ্যের উপর বলবৎ হবে। খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় হলেও সাধারণ ভাবে সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই বিধি প্রযোজ্য।

তবে কি রাজ্য এই আইন মেনে নেবে? প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা এখনও বিজ্ঞপ্তি হাতে পাইনি। সেটা পেলে নীতিগত অবস্থান নেওয়া হবে।’’ তবে রাজ্যের এক প্রবীণ আমলা জানিয়েছেন, এই নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। মানুষ কী খাবে আর কী খাবে না — তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু রাজ্যের পশুপালন, তার কেনাবেচা বা কসাইখানার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা রাজ্যকেই দিতে হবে।

এই প্রেক্ষিতে নতুন বিধি ভাল করে খতিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা হবে, তা রাজ্যের পক্ষে বাধ্যতামূলক কি না— জানান এক কর্তা। আইন মানা বাধ্যতামূলক হলেও সে ক্ষেত্রে প্রয়োগের দিকটা রাজ্যের হাতেই থাকবে। অর্থাৎ, আইন আইনের মতো থাকল, তা মানা, না-মানা রাজ্যের ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে।

যেমনটা হয়েছে ‘বেআইনি’ কসাইখানা বন্ধ করার আইনের ক্ষেত্রে। ২০০১ সালে তৈরি ওই কেন্দ্রীয় আইনের বলেই যোগী আদিত্যনাথ সরকার উত্তরপ্রদেশের প্রায় সমস্ত ‘বেআইনি’ কসাইখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ রাজ্যে কিন্তু তা হয়নি।

রাজ্যের ইঙ্গিত, আইন মানতে হলে তা রাজ্যের ‘লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট অফিসার’দের মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে। এতে প্রয়োগের চাবিকাঠি থাকবে রাজ্যের হাতেই। দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, বিধি মানতে হলে সীমান্তঘেঁষা ৪১টি গরুর হাট বন্ধ হবে। রাজ্যের সীমানা ঘেঁষা কয়েকশো হাটও বন্ধ হতে পারে। বন্ধ করতে হবে শ’খানেক কসাইখানাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন