কবে শেষ হবে আমরি মামলা, জানতে চান স্বজনরা

রাজ্যের তাবড় বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের ‘যথেচ্ছাচার’-এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগছেন। অথচ আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ৯৩ জনের মৃত্যুর মামলা নিয়ে রাজ্য সরকার সে ভাবে উদ্যোগী নয় কেন?

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:৩২
Share:

রাজ্যের তাবড় বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের ‘যথেচ্ছাচার’-এর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দাগছেন। অথচ আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ৯৩ জনের মৃত্যুর মামলা নিয়ে রাজ্য সরকার সে ভাবে উদ্যোগী নয় কেন? এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতদের পরিজনদের অনেকে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, ওই ঘটনায় হাসপাতালের গাফিলতি স্পষ্ট। তাই মামলা তরান্বিত করতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হোক। দেখা হোক অভিযুক্তদের শাস্তির দিকটিও।

Advertisement

অকালে ঝরে যাওয়া ১৪ বছরের প্রাকৃতা পালের বাবা ধনঞ্জয় পাল বা ২২ বছরের সঙ্গীতা পণ্ডিতের দাদা সুরজ পণ্ডিত বুঝে উঠতে পারছেন না, তাঁরা কী দোষ করলেন! ধনঞ্জয়বাবুর প্রশ্ন, ‘‘রোগীর বিলে অনিয়মের সুরাহা করা তো ভাল কথা, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতে আমাদের মতো যাদের ঘর শূন্য হয়ে গেল, তাদের ভোগান্তির শেষ কোথায়?’’ ২০১১-র ৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে আগুন লাগে। আগুনে পুড়ে ও ধোঁয়ায় দম আটকে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

আমরি-কাণ্ডের মামলার বর্তমান অবস্থাটা কী? গত সেপ্টেম্বরে বিচার শুরু হলেও এত দিনে মাত্র এক জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলায় মোট সাক্ষী ৪৫১ জন। আমরি-কাণ্ডে নিহত প্রৌঢ়া মৃদুলা গুহঠাকুরতার কন্যা পারমিতার প্রশ্ন, ‘‘এমন চললে ৪৫১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া তো জীবনে শেষই হবে না।’’ পুলিশ চার্জশিট দেওয়ার পরে বিচার ত্বরান্বিত করতে রোগীর আত্মীয়দেরই মাঠে নামতে হয়েছিল। তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করার পরেই গত বছর চার্জ গঠন করা হয়। এখনও হাইকোর্টে আমরি-কাণ্ডে দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য একটি মামলা ঝুলে আছে।

Advertisement

নিহত মুনমুন চক্রবর্তীর স্বামী শুভাশিস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা হাইকোর্টে আলাদা মামলা না-করলে হয়তো বিচার শুরুই হতো না এখনও।’’ সরকারি আইনজীবী শক্তিকুমার ভট্টাচার্য অবশ্য এই দেরি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে যাঁরা ওয়াকিবহাল তাঁরা মনে করেন, অভিযুক্তপক্ষে আমরি-র ১২ জন অধিকর্তা, বিশিষ্ট শিল্পপতি, ডাক্তারদের লাগাতার আবেদনে পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। যদিও অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী সেলিম রহমানের দাবি, অভিযুক্তরা যা করছেন, আইন মেনেই করছেন। তাঁরাও দ্রুত অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে চান।

জয়রামবাটীর ধনঞ্জয়বাবু বা হুগলির পুঁড়শুড়ার সুরজবাবু পাঁচ বছর ধরে ৪০-৫০টি শুনানিতে হাজির থেকেছেন। সাত-সকালে কলকাতা এসে দিনভর পড়ে থাকা। আমরি-কাণ্ডের নিহতদের পরিবার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সব মিলিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কেউ কেউ সরকারি চাকরিও পেয়েছেন। কিন্তু দোষীদের সাজা দিয়ে বিচার পেতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার তাঁরা।

পোড়খাওয়া আইনজ্ঞদের মত, প্রক্রিয়াগত জটিলতায় মামলায় দেরি হলেও রাজ্যের আইন মন্ত্রক সক্রিয় হলে সমস্যা কমে। বিচারে দেরি ঠেকাতে লিগ্যাল রিমেমব্র্যান্সার দফতর নোটিস পাঠিয়ে সমস্যার সুরাহায় উদ্যোগী হতে পারে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য তাঁর দফতরের তরফে গাফিলতি মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি আইনজীবীরা সব সময়েই চেষ্টা করেন দ্রুত মামলার কাজ সারতে। কিন্তু সব সময় বিষয়টা আমাদেরও হাতে থাকে না।’’

ফলে, আপাতত আমরি-কাণ্ডে নিহতদের মধ্যে জনা কুড়ির পরিবারই যা মাটি কামড়ে পড়ে। নিজেরা গাঁটের কড়ি খরচা করে আইনি লড়াই জারি রেখেছেন। বেসরকারি হাসপাতালের কুকাজ নিয়ে রাজ্য সরকার সরব হলেও জীবদ্দশায় সুবিচার দেখে যেতে পারবেন কি না— সেই দুশ্চিন্তা আমরি-র নিহতদের পরিজনদের পিছু ছাড়ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন