অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ হওয়ার পরেও উঠেছে ১০০ কোটি

বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগে ২০১৪ সালের মার্চে রোজ ভ্যালির সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পরেও বাজার থেকে ওই সংস্থা প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২২
Share:

বাজার থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলার অভিযোগে ২০১৪ সালের মার্চে রোজ ভ্যালির সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পরেও বাজার থেকে ওই সংস্থা প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

টাকা তোলার পদ্ধতিতেও কোনও বদল ঘটায়নি তারা। অনেক বেশি লাভের হিসেব দেখিয়ে আগে যে ভাবে টাকা তোলা হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেও সে ভাবেই টাকা তোলা হয়। টাকা বিনিয়োগ করলে পরে রোজ ভ্যালির হোটেলে সস্তায় বা নিখরচায় থাকা খাওয়ার টোপও দেওয়া হয়।

সিবিআই-এর দাবি, রোজ ভ্যালি কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই সব তথ্য হাতে পেয়েছে তারা। সেবি-র অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্তে নামে ইডি। পরের মাসের গোড়াতেই ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয় সংস্থার সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সংস্থার অ্যাকাউন্টে সেই সময়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ছিল। এর পরে ২৫ মার্চ গ্রেফতার করা হয় সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম কুণ্ডুকে।

Advertisement

গ্রেফতারের আগেই গৌতম সাংবাদিকদের জানান, ইডি অ্যাকাউন্টের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা খুব সঙ্কটে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে যায় কর্মীদের বেতন। অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করার প্রতিবাদে আদালত এবং ইডি অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান রোজ ভ্যালির এজেন্ট ও কর্মীরা। তদন্তে নেমে সিবিআই জানতে পেরেছে, ওই সময়ে একই সঙ্গে বাজার থেকে টাকা তোলার কাজও চালিয়ে গিয়েছিল রোজ ভ্যালি। সূত্রের খবর, বিহার ও ওড়িশা ছাড়া বেশ কিছু রাজ্যে এজেন্টদের নামিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলতে শুরু করেন রোজ ভ্যালির কর্মীদের একাংশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি, পঞ্জাব-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কিছু জায়গা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তোলে রোজ ভ্যালি। ওড়িশা ও বিহারে কড়া নজরদারি শুরু করে সেখানকার সরকার। তাই সেখান থেকে তারা তখন টাকা তুলতে পারেনি।

কী হয়েছে সেই টাকায়? রোজ ভ্যালি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের মার্চের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সব বিনিয়োগকারীর প্রকল্পের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল, তাঁদের অনেককেই টাকা ফেরত দেওয়া হয় বাজার থেকে তোলা ওই টাকা থেকে। রোজ ভ্যালি সংস্থার হোটেল এবং সোনার গয়নার ব্যবসাও চলেছে ওই টাকাতেই। এ ছাড়া সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতমের মামলা লড়ার জন্য দিল্লিতে তাবড় আইনজীবীদের নিয়োগ করা হয়। তাঁদের ‘ফি’ দিতেও বিপুল টাকা খরচ হয়েছে।

রোজ ভ্যালির হোটেল এবং সোনার গয়নার ব্যবসা এখনও রমরম করে চলছে। আর তা চালাচ্ছেন কর্মীরাই। জানা গিয়েছে, গৌতমের মা বিভা কুণ্ডু এবং বিনোদ কুমার নামে এক ব্যক্তি এখন হোটেলের ব্যবসা দেখছেন। বিভাদেবী থাকছেন দক্ষিণ কলকাতার একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে। ওই বহুতলেরই অন্য একটি ফ্ল্যাটে মেয়েকে নিয়ে থাকেন গৌতমের স্ত্রী শুভ্রা। ছেলে পড়ছে রাজ্যের বাইরে। এ সবের জন্য খরচও হয় ভাল।

সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন গৌতমের মা। তাঁকে দেখার জন্য দিন দু’য়েক প্যারোলে ছাড়াও পান গৌতম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন