যাদবপুরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আসন কেন বারবার খালি পড়ে থাকে, সেই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, সেখানকার কলা বিভাগে গবেষণার সব আসনও এ বার পূরণ হয়নি। গবেষণার জন্যই যে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক খ্যাতি, সেখানে প্রায় ১৭ শতাংশ খালি আসনে কী হবে, তার সদুত্তর মিলছে না।
বেশ কিছু আসন খালি থেকে যাওয়ার সমস্যার সঙ্গে বড় হয়ে উঠছে তা শূন্য থাকার কারণ হিসেবে ওঠা অভিযোগও। কিছু আবেদনকারীর অভিযোগ, দু’বছর ধরে প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাবেই এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। অভিযোগকারী প্রার্থীরা আদালতে যাওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রয়োজনে আইনের দ্বারস্থ হবো। গবেষণায় একটা স্বচ্ছ জায়গা তৈরি করতেই হবে।’’
সব বিভাগেই ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারভিউ নিয়ে আসন অনুযায়ী গবেষণার সুযোগ দেওয়াটাই নিয়ম। অভিযোগ, এই নিয়ম খাতায়-কলমে থাকলেও সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণটাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন বাংলা বিভাগের এক আবেদনকারীর অভিযোগ, প্রয়োজনীয় ন্যূনতম নম্বরের থেকে কম নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও অনেকে গবেষণার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। তালিকায় ওই সব প্রার্থীর অনেক আগে থাকা পড়ুয়ার ঠাঁই হচ্ছে না। আবার একই পড়ুয়ার নাম তফসিলি এবং সাধারণ ফেলোশিপ, দু’টি তালিকাতেই থেকে গিয়েছে। ফলে সুযোগ হারাচ্ছেন সাধারণ প্রার্থীরা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘নিয়ম অনুসারে তফসিলি উপজাতির জন্য চারটি আসন বরাদ্দ। কিন্তু এ-পর্যন্ত মাত্র দু’জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। বাকি খালি আসন নিয়ে কী করা হবে, স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন না ডিন।’’
অভিযোগ শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও অনিয়ম নিয়ে সরব হয়েছেন। যাদবপুরের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিলে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র বা ছাত্রীর নামের সঙ্গে সঙ্গে তার গ্রেড পয়েন্ট বা স্কোর দেওয়া হয়। সে-ক্ষেত্রে নির্বাচনে একটা স্বচ্ছতা থাকে। কিন্তু পিএইচডি-র তালিকায় আমরা জানতেই পারি না, কার কোন স্থান!’’ ‘ওয়েটিং লিস্ট’ না-থাকায় ছাত্রছাত্রীরা বুঝতেও পারেন না, পরবর্তী ক্ষেত্রে তাঁরা সুযোগ পেতে পারেন কি না। অন্য এক শিক্ষক জানান, ইন্টারভিউয়ের পরে নির্বাচন কমিটির কাছে নাম পাঠানো হয়। তার পরে যে-তালিকা আসে, তাতে অনেক সময়েই দেখা যায়, বিভাগের মনোনীত প্রার্থীর বদলে অন্য কেউ সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন। কেন এটা হয়? বিশেষ কোনও প্রার্থীকে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে নানা মহল থেকে আসা ফোন এর অন্যতম কারণ বলে ওই শিক্ষকের অভিযোগ।
অনিয়মের অভিযোগ আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কোনও কর্তার কাছ থেকেও। এমনই এক কর্তা জানান, তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত প্রার্থীদের জন্য দেওয়া ‘রাজীব গাঁধী ফেলোশিপ’-এর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ের দু’বছর কেটে গেলে কোনও প্রার্থী আর সেই ফেলোশিপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন না। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় এই ধরনের প্রার্থীর নামও স্থান পাচ্ছে!
গবেষণায় প্রার্থী নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিন অব আর্টস রজত আচার্য দায় চাপিয়েছেন বিভাগীয় অধ্যাপকদের উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি বিভাগ নিজস্ব পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ নিয়ে তালিকায় নাম তোলে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।’’ প্রার্থী নির্বাচনে স্বজনপোষণের জেরে যাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? রজতবাবুর আশ্বাস, ‘‘এমন তো নয় যে, এটাই শেষ! আমরা বছরে দু’বার ইন্টারভিউ নিই। ডিসেম্বরে আবার ইন্টারভিউ হবে। যাঁরা সুযোগ পাননি, তাঁরা তখন যোগ্য প্রমাণিত হলে অবশ্যই গবেষণার সুযোগ পাবেন।’’
কী বলছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস?
‘‘আমরা ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভাবেই বঞ্চিত হতে দেব না। যদি কোথাও কোনও ভাবে আইন লঙ্ঘিত হয়ে থাকে, সে-ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’’ বললেন উপাচার্য।