পুলকারে দুর্ঘটনা রুখতে একগুচ্ছ নির্দেশ দিল পরিবহণ দফতর । —ফাইল চিত্র।
উলুবেড়িয়ায় পুলকার দুর্ঘটনায় তিন শিশুমৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল পরিবহণ দফতর। পুলকার পরিষেবার আমূল সংস্কারে উদ্যোগী হল তারা। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি বৈঠকে একগুচ্ছ নয়া সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সোমবার পুলকার মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী-সহ শীর্ষ আধিকারিকেরা। সেই বৈঠকে পুলকার দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে বলে মন্তব্য করেন পরিবহণমন্ত্রী। তবে পরিবহণ দফতরের এই উদ্যোগকে ‘মুখরক্ষার চেষ্টা’ বলে সমালোচনা করছেন পুলকারে যাতায়াত করা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নন ট্রান্সপোর্ট গাড়িতে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যাবে না। কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট স্কুলের কাছে নথিভুক্ত গাড়িতেই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হবে। অভিভাবকেরা এ বার থেকে গাড়ির চালকের নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি রাখার পাশাপাশি, ‘এমপরিবহণ মোবাইল অ্যাপ’ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটে নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকেই পুলকারে যেন ওঠা-নামা করানো হয়, তা-ও বলা হয়েছে। স্কুলের পড়ুয়াদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যেমন গাড়ির ওভারটেক, ওভার স্পিডিং, সিট বেল্ট ব্যবহার না-করার ফলে কী হতে পারে, সে সব প্রসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অবগত করাতে অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও, স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে পরিবহণ দফতরের তরফে বলা হয়েছে, গাড়ির নির্দিষ্ট তালিকা রাখতে হবে। গাড়ির চালক, অ্যাটেনডেন্টদের মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট পাঁচ বছর পর্যন্ত রেখে দেওয়া এবং সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা। পরিবহণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, এবং চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর গাড়ির বাইরে ও ভিতরে লিখে রাখা।
পরিবহণ দফতরের নির্দেশ, স্কুলবাস ও পুলকারের ক্ষেত্রে সফ্ট টপ গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। বাসের রং করাতে হবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী। পারমিটে উল্লিখিত নির্দিষ্ট রুট ছাড়া বাইরের স্কুলে গাড়ি না-চালানোর উপর বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। গাড়ি এবং গাড়িচালকের বাণিজ্যিক পারমিট থাকা বাধ্যতামূলক। গাড়ির দূষণ-সহ কর, পারমিট, বিমা এবং পিইউসিসি-র নথি আপডেট করিয়ে রাখতে হবে। গাড়ির প্রতিটি আসনে সিট বেল্ট থাকা এবং তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, উলুবেড়িয়ার বহিরা গ্রামে পুলকার দুর্ঘটনায় তিন খুদে পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়।
ঘটনার তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানায়, কয়েক মাস আগেই ওই গাড়িচালকের হৃদ্যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। চিকিৎসকের ছ’মাস বিশ্রামের পরামর্শ অমান্য করেই তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সে দিন তাঁর নিজের পুলকার নয়, বন্ধুর গাড়ি চালিয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন পড়ুয়াদের আনতে। এ সব তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই অভিভাবকেরা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। তাই পরিবহণ দফতর দ্রুত বৈঠকে বসে বিষয়টি নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে।
পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘বৈঠকের আলোচনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে পরিবহণ দফতর থেকে বলা হয়েছে যে সব ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি পুলকার হিসাবে চালানো হচ্ছে, সেগুলি যেন আগামী তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক গাড়িতে রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়। তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে যে সব বাণিজ্যিক গাড়ি পুলকার হিসেবে চলছে, তাদের রোড ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ছাড়ের আবেদন জানিয়েছি। এই বিষয়ে পরিবহণ দফতর আমাদের অনুরোধ মেনে নিলে পরিষেবা দিতে আমাদের আরও সুবিধা হবে।’’