খুনের পরে আকাঙ্ক্ষার ব্যাগ নিতে দিল্লি গিয়েছিল উদয়ন

গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মাকে। ভেঙেছিল ঘাড়ের হাড়। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মিলেছে এই তথ্য।শনিবার ভোপালের গোবিন্দপুরা থানার কনস্টেবল প্রদীপকুমার মিনা বাঁকুড়া সদর থানায় এসে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জমা দেন।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
Share:

গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল বাঁকুড়ার আকাঙ্ক্ষা শর্মাকে। ভেঙেছিল ঘাড়ের হাড়। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে মিলেছে এই তথ্য।

Advertisement

শনিবার ভোপালের গোবিন্দপুরা থানার কনস্টেবল প্রদীপকুমার মিনা বাঁকুড়া সদর থানায় এসে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট জমা দেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, ‘‘রিপোর্টে গলা টিপে, শ্বাসরোধ করে খুনের কথা বলা হয়েছে। আকাঙ্ক্ষার গালে কিছু চোটের চিহ্ন মিলেছে। খুনের আগে ধ্বস্তাধস্তির ফলে সেটি হয়ে থাকতে পারে।’’ খুনের আগে কি আকাঙ্ক্ষাকে অচৈতন্য করে দেওয়া হয়েছিল? সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যেতে পারে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা বীরেন্দ্র দাস, মা ইন্দ্রাণী দেবী এবং আকাঙ্ক্ষা—তিন জনের ক্ষেত্রেই মৃত্যু নিশ্চিত করতে নিথর হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁদের মুখ প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে, তা বেঁধে দিয়েছিল উদয়ন। তদন্তকারীদের কাছে সে দাবি করেছে, একটি বিদেশি সিরিয়াল দেখে এই ভাবনা তার মাথায় আসে।

খুনের কারণ সম্পর্কে উদয়ন একাধিক বার এক-এক রকম বলায় এখনও সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। উদয়নের বয়ান তারা সম্পূর্ণ বিশ্বাসও করছে না।

Advertisement

জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, খুন করার পরে আকাঙ্ক্ষার দেহ ট্রাঙ্কের মধ্যে ভরে উদয়ন তাতে সিমেন্ট ঢেলে দেওয়ায় মৃতদেহটি প্রায় মমির মতো হয়ে যায়। ট্রাঙ্কবন্দি দেহ ভোপালের সাকেতনগরের বাড়িতে রেখে গত বছর ১৬ জুলাই উদয়ন চলে যায় দিল্লি। সেখানে একটি হোটেলে আকাঙ্ক্ষা এবং উদয়ন আগেও বেশ কয়েকবার উঠেছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই আমেরিকা পাড়ি দেবেন ভেবে আগেভাগে তিনটি ব্যাগে কিছু মালপত্র ওই হোটেলে রেখে এসেছিলেন আকাঙ্ক্ষা। সেই ব্যাগ তিনটি নিয়ে সাকেতনগরের বাড়িতে ফিরে আসে উদয়ন। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা জানতেন, দিল্লি গেলে তাঁদের মেয়ে ওই হোটেলে ওঠেন। তাঁরা খোঁজ করতে ওই হোটেলে পৌঁছে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিল উদয়ন। তাই দ্রুত সে ব্যাগ আনতে গিয়েছিল।

সাকেতনগরে ফিরেই উদয়ন টের পায়, ট্রাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। এর পরেই সেলোটেপ দিয়ে ট্রাঙ্কটিকে ভাল ভাবে মুড়ে ফেলে সে। ঘরের দরজা-জানলার ফাঁকও বন্ধ করে দেয় সেলোটেপ দিয়ে। পরে ট্রাঙ্ক ঘিরে সিমেন্টের বেদি বানিয়ে ফেলে।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, উদয়ন জালিয়াতি করে মায়ের পেনশনের ২৮ হাজার টাকা তুলত। বাড়ি ভাড়া বাবদ পেত সাড়ে চার হাজার টাকা। এ ছাড়া, বাবার অ্যাকাউন্ট থেকে মাসে দশ হাজার টাকা করে তুলত সে। তবে রাইপুরের বাড়ি বিক্রির পরে যে নগদ টাকা পেয়েছিল, বিলাস বৈভবের জন্য সেটিই ছিল উদয়নের মূল ভরসা। সেই টাকা ফুরিয়ে আসতেই যে ঝাঁচকচকে জীবনযাপনে সে অভ্যস্ত ছিল, তাতে সমস্যা দেখা যায়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার জানান, একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ২০১৩ সালে প্রায় আট লক্ষ টাকা দিয়ে দু’টি সেকেন্ড-হ্যান্ড বিদেশি গাড়ি কিনেছিল সে। টাকা ফুরনোর সেটাও অন্যতম কারণ।

রায়পুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয় অগ্রবাল এ দিন জানান, উদয়নের এক মাসি ভোপালের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন রায়পুরের তদন্তকারীরা। তবে তিনি কথা বলতে চাননি। ২০১০ থেকে ২০১৬-র মধ্যে উদয়ন আরও কাউকে খুন করেছে কি না তা খতিয়ে দেখছে ছত্তীসগঢ় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন