Sandeshkhali Incident

সন্দেশখালি: কমিশনের নজরে পুলিশ ও প্রশাসন

গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তথ্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০১
Share:

প্রতিবাদরত সন্দেশখালির মহিলারা। — ফাইল ছবি।

দিল্লির নির্বাচন সদনে হওয়া প্রশিক্ষণ পর্বেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কমিশনের কড়া মনোভাবের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন রাজ্যের জেলাশাসকেরা। সে ব্যাপারে কোনও গাফিলতি কমিশন যে বরদাস্ত করবে না, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার তা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। ফলে প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান, সন্দেশখালি ঘটনার পরে এ রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা কমিশনের আতশকাচের তলায় আসতে চলেছে।

Advertisement

গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তথ্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, সে দিনই রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে চূড়ান্ত হেনস্থা হয়ে ফিরতে হয়েছিল ইডি অফিসার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের।

প্রসঙ্গত, ওই দিন থেকেই প্রতিটি জেলা প্রশাসন গত নভেম্বর-ডিসেম্বরের সময়ের থেকে আইনশৃঙ্খলার তথ্য প্রতি সপ্তাহে পাঠাচ্ছেন নির্বাচন সদনে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তাতে সন্দেশখালির দু’টি ঘটনার উল্লেখ থাকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রথমটি শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে ইডির হেনস্থা।

Advertisement

দ্বিতীয় ঘটনায় নানা অত্যাচারের অভিযোগে সরব হয়ে পথে নেমেছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি হয়েছিল অগ্নিগর্ভ। দু’টি ঘটনা নিয়েই পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। অন্তরালে থেকে প্রায় নিয়মিত নানা বার্তা দেওয়া অন্যতম মূল অভিযুক্ত শাহজাহানকে এখনও কেন পুলিশ ধরতে পারেনি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। ফলে ভোটের আগে এই পরিস্থিতি রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহলে স্বস্তি দিচ্ছে না।

ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, শুধুমাত্র নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকা আইনশৃঙ্খলার তথ্যই (সন্দেশখালি যা নয়) এখনকার রিপোর্টে থাকবে। তার বাইরে কিছু থাকার কথা নয়। পাশাপাশি, জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা, অস্ত্র বা অন্যান্য বেআইনি সামগ্রি উদ্ধারের তথ্য সেই রিপোর্টে থাকে। তবে কমিশন-কর্তারা রাজ্যে এসে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও বৈঠক করবেন, সেখানে বিরোধীদের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে সন্দেশখালি-কাণ্ডের উল্লেখ থাকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেখানে ওই ঘটনার পর থেকে পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সে ক্ষেত্রে কমিশন তা গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করতে পারে।

প্রসঙ্গত, আগামী ৪ মার্চ রাজ্যে আসছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ কমিশনের ফুল-বেঞ্চ। ৫ মার্চ স্বীকৃত সব রাজনৈতিক দল এবং জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করার কথা তাঁদের। ৬ মার্চ মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা কমিশন-কর্তাদের। ভোট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওই বৈঠকে ভোটের সঙ্গে যুক্ত সবক’টি বিষয় আলোচনায় আসে। বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এতদিন ধরে পাওয়া আইনশৃঙ্খলা রিপোর্টের সঙ্গে বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখা হয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং ভূমিকা। এলাকায় কারা গোলমাল পাকাতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, তাদের ধরতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেছে, তা-ও জানতে চায় কমিশন। একই সঙ্গে আগের ভোটগুলিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও তথ্যও থাকতে হয়।

অভিজ্ঞ আধিকারিকদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সন্দেশখালি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। বিভিন্ন সময়ে কড়া বার্তা শোনা গিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের তরফেও।

এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সব জেলা-কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ় আফতাব। সূত্রের অনুমান, কমিশন-কর্তাদের সঙ্গে মূল বৈঠকের আগে সেটি হবে প্রস্তুতি সংক্রান্ত। তাতে ভোট-পরিকাঠামো, প্রস্তুতি যেমন আলোচ্য বিষয় যেমন হবে, তেমনই আইনশৃঙ্খলা এবং তার রিপোর্টও আলাদা ভাবে গুরুত্ব পেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন