গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন ভারতীয়ের প্রাণহানির ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে ভারত সরকার। সেই পদক্ষেপ অনুযায়ী ভারতে থাকা পাকিস্তানের নাগরিকদের তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, ভারতের জেলে বন্দি পাকিস্তানের নাগরিকদের নিয়ে কী অবস্থান নেবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জেলে বন্দি পাক অপরাধীদের আপাতত এ দেশের জেলেই থাকতে হবে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, যে অপরাধী যে পরিমাণ শাস্তি পেয়েছে, তাকে সেই শাস্তির সময়কাল এ দেশের জেলেই কাটাতে হবে। সাজার মেয়াদ পূরণের পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সংশোধনাগারে ছড়িয়েছিটিয়ে ছয় থেকে আট জন পাক-বন্দি রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নবান্নকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন রাজ্য কারা দফতরের আধিকারিকেরা। কারণ, আপাতত ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত জেলবন্দি পাক অপরাধীদের নিয়ে তাঁদের নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কারা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের শীর্ষমহল থেকে পাকিস্তানি অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বা মন্তব্য করার প্রশ্ন ওঠে না। আপাতত যেমন চলছিল, তেমনই চলবে।’’
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জেল তথা সংশোধনাগারের নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব অমিত শাহের অধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। জেলগুলির দেখভাল সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার করলেও কারাগার সংক্রান্ত যাবতীয় নীতি তৈরি করে অমিতের মন্ত্রক। তাই পাক বন্দিদের নিয়ে রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান জানতে চেয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিজেদের অবস্থানের কথা রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে হাজারের বেশি পাকিস্তানের নাগরিক ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জেলে বন্দি। তাদের বেশির ভাগই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে শাস্তি পেয়েছে।
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর সব রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল কেন্দ্রের। পাক নাগরিকদের নিয়ে নিজেদের অবস্থান ঘোষণার আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সুত্র জানাচ্ছে, সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কারা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পরেই ‘অপরাধী’ পাক নাগরিকদের ভারতীয় জেলে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানাচ্ছেন, ভারতের বিভিন্ন জেলে যে সমস্ত পাক অপরাধী বন্দি রয়েছে, তাদের বেশির ভাগই জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। এমনিতেই জেলে তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। পহেলগাঁও হামলার পরে ওই অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে তারা পাকিস্তানে ফিরে আবার ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হতে পারে। কারণ, দীর্ঘ দিন ভারতে থাকার সুবাদে তারা এ দেশের মাটি ভাল ভাবে চিনে গিয়েছে। তাই ওই সব অপরাধীকে দেশে না পাঠিয়ে ভারতে জেলবন্দি রাখাই শ্রেয় মনে করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাই শাহের মন্ত্রক আপাতত ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত পাক অপরাধীদের পাকিস্তানের জেলে পাঠাতে নারাজ।