ফের দুর্ঘটনা টয় ট্রেনে, যত্ন নিয়ে প্রশ্ন

শর্মিলা ঠাকুরের পর্দা জোড়া চোখ। গালে টোল ফেলা হাসি। তাঁর ট্রেনের পাশেই জিপে রাজেশ খন্না। সেই ষাটের দশকের ‘আরাধনা’ থেকে এই বছর চারেক আগের রণবীর কপূর আর প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ‘বরফি’। টয় ট্রেনের ম্যাজিকে মোহিত সব প্রজন্মই।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কৌশিক চৌধুরী

কলকাতা ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০৪:২৮
Share:

লাইনে চাকা আটকে এ ভাবেই হেলে যায় কামরা। — নিজস্ব চিত্র।

শর্মিলা ঠাকুরের পর্দা জোড়া চোখ। গালে টোল ফেলা হাসি। তাঁর ট্রেনের পাশেই জিপে রাজেশ খন্না। সেই ষাটের দশকের ‘আরাধনা’ থেকে এই বছর চারেক আগের রণবীর কপূর আর প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ‘বরফি’। টয় ট্রেনের ম্যাজিকে মোহিত সব প্রজন্মই।

Advertisement

কিন্তু ১৮৮১-তে চালু হওয়া এই হেরিটেজ রেল ন্যূনতম যেটুকু যত্ন দাবি করে, ভুক্তভোগীদের দাবি, তার কিছুই পায় না। মঙ্গলবার ফের কার্শিয়াং শহরে ঢোকার ৪ কিলোমিটার আগে গোথেলস কলেজ লাগোয়া খারে এলাকায় ট্রেনের শেষ কামরার চাকা একটি সেতুতে ওঠার মুখে লাইনে আটকে যায়। কামরাটি সেতুর মধ্যে হেলেও পড়ে। ঘণ্টা খানেক এই অবস্থা পড়ে থাকার পর কামরার সঙ্গে সিঁড়ি লাগিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয়।

টয় ট্রেন নিয়ে এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্রই। প্রশ্ন, কেন? কালকা-সিমলা হেরিটেজ টয় ট্রেনের তো এমন বেহাল দশা নয়। অথচ দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ির এই ট্রেনটিতে বিপত্তি লেগেই থাকে। গত বছর ২৬ জানুয়ারি চুনাভাটির কাছে টয় ট্রেনের একটি জয়রাইডে ব্রেক ফেল হয়। ট্রেনটি নীচে নেমে যেতে থাকলে আতঙ্কিত যাত্রীরা কামরা থেকে লাফ দেন। কলকাতার বাসিন্দা পর্যটক মলি পাল লাফ দিয়ে পড়ে মারাও যান। ওই সময় পরপর তিন দিন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল। মাঝে দীর্ঘ দিন বন্ধও করে রাখা হয় স্বাভাবিক পরিষেবা। শুধু এনজেপি, কার্শিয়াং, দার্জিলিং থেকে চালানো হত। তখন প্রশ্ন উঠেছিল টয় ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। কিন্তু তার পরে এখনও মাঝেমধ্যে ঢালু বাঁকের মুখে অনেক সময় ট্রেনের চাকা, কামরা লাইনচ্যুত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই ডালি ফটকের কাছে এমন ঘটনা ঘটেছিল।

Advertisement

অথচ উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের আওতায় থাকলেও, আলাদা ভাবেই টয় ট্রেনের নজরদারি করে রেল মন্ত্রকের হেরিটেজ বোর্ডও। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ টাকাও সরাসরি বরাদ্দ করা হয়। সম্প্রতি টয় ট্রেনের পরিকাঠামো, স্টেশনের আধুনিকীকরণ, হেরিটেজ সংক্রান্ত কাজের জন্য ইউনেসকোর তরফেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ হয়েছে। টয় ট্রেন ১৯৯১-এ হেরিটেজ তকমা পায়। ২০০২-এ কাঠের স্লিপার তুলে কংক্রিটের স্লিপার বসানো হয়। কিন্তু ২০১০ থেকে সাড়ে পাঁচ বছর এনজেপি-দার্জিলিঙের মধ্যে পাগলাঝোড়া, তিনধারিয়ার ধসের জন্য বন্ধ ছিল টয় ট্রেন। ২০১৫-র জুন থেকে পরিষেবা নিয়মিত হয়। বেড়েছে টিকিটের দামও। কিন্তু বিপত্তি কমেনি।

উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাকই হয়।’’ কিন্তু রেল সূত্রেই খবর, রক্ষণাবেক্ষণ খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। তার প্রধান কারণ, এই রেল লাভবান নয়। ভর্তুকিতে চলে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। রেল বোর্ডের কর্তাদের বক্তব্য, বিদেশি পর্যটকেরা আকৃষ্ট হলে এই ট্রেনকে লাভজনক করা যেত। কিন্তু শেষ ক’বছরে পাহাড়ে বারবার নানা আন্দোলন ও এনজেপি থেকে সরাসরি টয় ট্রেন না চালানোয় বিদেশি পর্যটকও কমেছে। একটা আধটা
ট্রেন মাঝে মধ্যে বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে অর্ধেক রাস্তা যেত। কিন্তু ধসের পরে তা-ও বন্ধের মুখে। তবে টয় ট্রেন এখন সরাসরি এনজেপি থেকেই যাচ্ছে বলে দেশের পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্যোগী হয়েছে আইআরসিটিসি-ও। কিন্তু এ দিনের দুর্ঘটনায় ওই উদ্যোগে ভাটা পড়তে পারে বলে রেল সূত্রেরই আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন