স্কুলে ঢুকে ছাত্রদের বের করে বন্‌ধ পালনের চেষ্টা

কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টা বন্‌ধে শাসকদলের দখলে থাকা রামপুরহাট পুরসভায় যোগ দিলেন না পুরকর্মীরা। অভিযোগ, বন্‌ধ সমর্থনকারীরা লোহাপুর এমআরএম হাই স্কুলে স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে দিয়ে স্কুলে বন্‌ধ পালন করার চেষ্টা চালাল। কংগ্রেসের দাবি, সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের কর্মীরা রামপুরহাট শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক ও সরকারি অফিসের গেটে দলীয় পতাকা এবং বনধের সমর্থনে পোষ্টার সাঁটিয়ে দিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:১১
Share:

রামপুরহাট আদালতের সামনে।

কংগ্রেসের ডাকা ১২ ঘণ্টা বন্‌ধে শাসকদলের দখলে থাকা রামপুরহাট পুরসভায় যোগ দিলেন না পুরকর্মীরা। অভিযোগ, বন্‌ধ সমর্থনকারীরা লোহাপুর এমআরএম হাই স্কুলে স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বের করে দিয়ে স্কুলে বন্‌ধ পালন করার চেষ্টা চালাল। কংগ্রেসের দাবি, সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের কর্মীরা রামপুরহাট শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক ও সরকারি অফিসের গেটে দলীয় পতাকা এবং বনধের সমর্থনে পোষ্টার সাঁটিয়ে দিয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল নটার মধ্যে ওই সমস্ত পতাকা এবং পোস্টার পুলিশ খুলে ও ছিঁড়ে দেয় বলে কংগ্রেস কাউন্সিলর জামালউদ্দিন সেখের অভিযোগ। জেলা পুলিশ অবশ্য এ কথা উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

এ দিন সকালে পুরসভায় ঢুকতে গেলে, কংগ্রেসের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জামালউদ্দিন সেখ একাই কর্মীদের অফিসে ঢুকতে নিষেধ করেন। সিআইটিইউ প্রভাবিত পুর কর্মীচারীদের সংগঠনের সদস্য রামপুরহাট পুরসভার স্থায়ী অস্থায়ী প্রায় ৩৫ জন কর্মীরা কাউন্সিলরের অনুরোধে অফিসে না প্রবেশ করে দীর্ঘক্ষণ পুরসভার সামনে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে অবশ্য তাঁরা একে একে বাড়ি চলে যান। রামপুরহাট পুরসভার কর্মী এবং পুর কর্মচারী সংগঠনের জেলা সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে ঢোকার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু পুরসভার প্রধান গেটে কাউন্সিলর দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের অফিসে না ঢুকতে অনুরোধ করেন। সেই জন্য প্রায় ৩৫ জন কর্মী কাজে যোগ দিইনি।’’

ঘটনা হল, পুরসভার কর্মীরা কাজে না যোগ দিলেও উপ-পুরপ্রধান সুকান্ত সরকারকে দেখা যায় পুরসভায় নিজের ঘরে কাজ করতে। অন্যান্য তৃণমূল কাউন্সিলরদের এ দিন পুরসভায় দেখা যায়নি। বেলা ১১টার পরে সুকান্ত সরকারকে দেখা যায় পুরসভা থেকে বেড়িয়ে যেতে। অফিস থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর সুকান্তবাবু বলেন, ‘‘পুরসভা খোলা ছিল। আমি এবং সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসে ছিলাম। পরে ওয়ার্ডের নিকাশি নালা সংস্কারের দেখভাল করতে বেড়িয়ে যেতে হয়।’’

Advertisement


ট্রেন থামানো হল লোহাপুর স্টেশনে।

এ দিন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে বাইকে করে বন্‌ধের সমর্থনে শহরের এক প্রান্ত আর এক প্রান্ত ঘুরতে দেখা যায়। একসময় রামপুরহাট আদালতের সামনে দেশবন্ধু রোডে আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি মিলটন রসিদের সঙ্গে জিম্মিকে বিক্ষোভে সামিল হতেও দেখা যায়। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য রামপুরহাট থানার আইসি আবু সেলিম পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনা স্থলে যান। আন্দোলনরত কংগ্রেস কর্মীদের আদালত চত্ত্বরে প্রবেশের মূল গেট থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আইসিকে দেখা যায় ঠেলতে ঠেলতে রামপুরহাট থানার দিকে নিয়ে যেতে। এতে কংগ্রেস কর্মীরা থানা যাওয়ার রাস্তায় না গিয়ে নিজেরাই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গফুর বস্তির দিকে চলে যায়।

দু’তিনবার কংগ্রেস কর্মীরা টোটো এবং বাইক নিয়ে শহরে বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল করেন। এ দিন অবশ্য রামপুরহাট আদালত খোলা থাকলেও আইনজীবিদের অবর্তমানে কোনও মামলা আদালতে তোলা হয়নি। মামলায় হাজিরা দিতে এসে ঘুরে যেতে হয় অনেককে। আদালতে কাজ না হলেও রামপুরহাট শহরের স্কুল গুলি খোলা ছিল। খোলা ছিল রামপুরহাট কলেজও। বেসরকারি বাস না চললেও সরকারি বাসের সংখ্যা কম ছিল। শহরের বড় হাটতলা এলাকা থেকে প্রধান প্রধান রাস্তায় বড় বড় দোকান বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল ডাকঘরও।

লোহাপুর স্টেশনে বন‌্‌ধ সমর্থনকারীরা আপ এবং ডাউন রামপুরহাট-কাটোয়া লোকাল ট্রেন কিছুক্ষণের জন্য অবরোধ করেন। এমআরএম হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘‘স্কুল চলছিল। সকাল সাড়ে এগারটা নাগাদ একদল বন্‌ধ সমর্থনকারী স্কুলের গেট দিয়ে জোর করে ঢুকে কিছু ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ছুটি বলে বের করে দেয়। এতে পঞ্চম এবং ষষ্ট শ্রেণির বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী স্কুল থেকে চলে যায়। স্কুলের শিক্ষক এবং অনেক পড়ুয়া এতে ভয় পেয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে স্কুলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরে।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি অবশ্য বলেন, ‘‘এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। গেটের বাইরে শ্লোগান শুনে কিছু ছাত্রছাত্রীরা বাইরে চলে যায়।’’

ছবি: সব্যসাচী ইসলাম, অনির্বাণ সেন, তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমনাথ মুস্তাফি এবং বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন