২৮ নভেম্বর বিধাননগর সেক্টর ফাইভের দফতরে ডাকা বৈঠকে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল-সহ অন্যান্য নেতা। ছবি: সংগৃহীত।
কোনও পদ বা দায়িত্বে না থাকা পুরনো মুখেদের বিধানসভা ভোটের আগে সক্রিয় করে তুলতে ২৫ ডিসেম্বর কলকাতায় বিশেষ বৈঠক ডাকল বিজেপি। নামে বৈঠক হলেও তাতে কার্যত সম্মেলনের ধাঁচ রয়েছে। কারণ, তপন শিকদার থেকে দিলীপ ঘোষ পর্যন্ত সমস্ত রাজ্য সভাপতির মেয়াদে গুরুদায়িত্ব সামলানো কোন কোন নেতা এখন দলের কাজ থেকে দূরে, তা চিহ্নিত করে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে তাঁদের সকলকে বর্তমান নেতৃত্বের মুখোমুখি হাজির করানোর তোড়জোড় চলছে। গোটা আয়োজনের দায়িত্বও পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ‘আদি বিজেপি’ হিসাবে পরিচিত কয়েক জন নেতার উপর।
প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এককালে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। পরে সহ-সভাপতি হন। সুকান্ত মজুমদারের জমানা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতাপ আর তেমন কোনও পদে নেই। কিন্তু নির্বাচন-পূর্ববর্তী কাজ সামলানো, মনোনয়ন প্রক্রিয়ার নথিপত্র তৈরি করানো-সহ নানা কাজের দায়িত্ব প্রতাপের উপরে ছিল। তাঁকেই এ বার অন্তরালবর্তী প্রবীণ নেতাদের জমায়েত আয়োজনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন আর এক প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক। রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতেশ তিওয়ারি, সায়ন্তন বসুদেরও এই আয়োজনের প্রস্তুতিপর্বের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা চিহ্নিত করছেন সেই সব পুরনো নেতা এবং পদাধিকারীকে, যাঁরা এখনও কর্মক্ষম অথচ দলের কোনও কাজে লাগছেন না।
বৈঠকে কাদের ডাকা হবে, তার কয়েকটি মাপকাঠিও অলিখিত ভাবে নির্ধারিত হয়েছে। যে রাজ্য সভাপতির জমানায় বিজেপি প্রথম বার পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও লোকসভা আসন জিতেছিল, তিনি তপন শিকদার। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তাঁর দ্বিতীয় দফার সভাপতিত্বে বিজেপি পর পর দু’টি নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা আসন জিততে পেরেছিল। তাই সেই যুগ থেকে দিলীপের সভাপতিত্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত রাজ্য কমিটিতে কারা পদাধিকারী ছিলেন, তা খুঁজে বার করা হয়েছে। অর্থাৎ, অসীম ঘোষ, তথাগত রায়, সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় এবং রাহুল সিংহের জমানাও এর অন্তর্ভুক্ত। শুধু রাজ্য পদাধিকারীই নন, ওই সময়কালে যাঁরা বিভিন্ন জেলায় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে দলের টিকিট পেয়েছিলেন, তাঁদের নামের তালিকাও খুঁজে বার করা হচ্ছে।
পুরনো নেতাদের মধ্যে এখন আর যাঁরা কোনও গুরুদায়িত্বে নেই, ইতিমধ্যেই তাঁদের অনেককে ডেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল একটি বৈঠক করেন গত ২৮ নভেম্বর। সে বৈঠকে ৫০-৬০ জন ডাক পেয়েছিলেন। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীরাও ছিলেন। বৈঠকের লক্ষ্য ছিল এই বার্তা দেওয়া যে, ভোটমুখী রাজ্যে বিজেপির পুরনো মুখেরাও সমান ভাবে মাঠে নামুন। তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপির যত রকমের ভাষ্য, তার প্রচার আরও বেশি মুখের মাধ্যমে হোক। সেখানেই কর্মক্ষম থাকা সত্ত্বেও আপাতত দলের কোনও কাজে নেই, এমন আরও অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা নিয়ে কথা হয়। সেখানেই প্রস্তাব আসে ২৫ ডিসেম্বর পুরনো নেতাদের ডেকে একটি পুনর্মিলন আয়োজনের। ২৮ তারিখের বৈঠকে উপস্থিত এক প্রাক্তন রাজ্য পদাধিকারীর কথায়, ‘‘একটি মণ্ডল কমিটি নিজেদের এলাকায় জনসভা বা পথসভা করছে। সেই এলাকায় হয়তো এমন একজন থাকেন, যিনি এককালে রাজ্য বিজেপির সম্পাদক ছিলেন বা জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এখন আর কোনও দায়িত্বে নেই। তাঁকে যাতে প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে ওই সভায় ডাকা হয় এবং সসম্মানে মঞ্চে জায়গা দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি প্রেক্ষাগৃহে ওই বৈঠকের আয়োজন হচ্ছে। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতেই হবে পুনর্মিলন।