দুর্নীতি-ঔদ্ধত্যে নিশানায় অধিকারীরা
Akhil Giri

‘গর্বে’র প্রচারে সপুত্র অখিল, নেই সৌমেন্দুরা

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বৃত্তে রামনগরের বিধায়ক অখিলের অবস্থান অধিকারীদের বিপরীতে। সেই অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরিই কাঁথি শহরে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচির দায়িত্ব পেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি ও তমলুক শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৫:৩৭
Share:

দলের কর্মী সম্মেলনে অখিল পুত্র সুপ্রকাশ গিরি। রবিবার কাঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজের বিধানসভা নন্দীগ্রামে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি করেননি শুভেন্দু অধিকারী। দলের দ্বিতীয় ধাপের জনসংযোগ কর্মসূচি ‘বাংলার গর্ব মমতা’তেও নেই ‘অধিকারী’রা। পরিস্থিতি এমনই যে অধিকারীদের ‘খাসতালুক’ কাঁথিতে রবিবার নতুন জনসংযোগ কর্মসূচি সারলেন সপুত্র অখিল গিরি। শুভেন্দু অবশ্য এ দিন জেলাতেই ছিলেন। গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বৃত্তে রামনগরের বিধায়ক অখিলের অবস্থান অধিকারীদের বিপরীতে। সেই অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরিই কাঁথি শহরে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচির দায়িত্ব পেয়েছে। কাঁথি শহর পড়ে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার মধ্যে। এখানকার বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অন্যত্র জনসংযোগের দায়িত্ব পাওয়ায় সুপ্রকাশকে এই বিধানসভায় ‘গর্ব’ প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সামনেই কাঁথিতে পুরভোট। যদিও এ দিন কর্মসূচির প্রথম পর্বে কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী-সহ ২০জন কাউন্সিলরই গরহাজির ছিলেন। ছিলেন শুধু ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুবল মান্না।

এ দিন শুভেন্দুর নাম না করেই তাঁকে নিশানা করেন অখিল। বলেন, ‘‘দিঘায় ১২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গেট করা হয়েছ। ৮৫ কোটি টাকায় কনভেনশন সেন্টার এবং মূল দিঘায় সাড়ে চারশো কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও লোকসভা ভোটে উদয়পুর থেকে দিঘা গেট পর্যন্ত ১০টি বুথে তৃণমূল হেরেছে। এটা ভাবতে আমাদের লজ্জা লাগে।’’ অখিলের আরও খোঁচা, ‘‘কিছু নেতা আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে গিয়েছেন। তাই দল পিছিয়ে পড়ছে। তাঁদের জন্য সকলে কেন খেসারত দেবেন।’’ এই কর্মসূচিতে অধিকারী পরিবারের না থাকাকেও বিঁধেছেন অখিল। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় আহাম্মক, নিজের কর্মসূচিতে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ লিখতে পারেন না। যাঁরা মমতাকে অস্বীকার করেন, তাঁরা দল ছেড়ে চলে যান।’’

Advertisement

অখিল-পুত্র সুপ্রকাশের দাবি, ‘‘চেয়াম্যান-সহ ২১জন কাউন্সিলরকে আমন্ত্রণপত্রের পাশপাশি নিজে ফোনে জানিয়েছি। জেলা সভাপতি-সহ বাকি পদাধিকারীদেরও জানিয়েছি।’’ কিন্তু তা-ও কেন এলেন না? পুরপ্রধান সৌমেন্দুর জবাব, ‘‘সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছুই বলব না। যা বলার বলার দলের নেতৃত্বের কাছে বলব।’’ আর গোটা ঘটনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘শনিবার দলীয় বিধায়কেরা এই কর্মসূচি করেছেন। রবিবার কে, কোথায়, কী করেছেন আমার জানা নেই।’’ আর অখিলের অভিযোগ সম্পর্কে শিশিরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওঁর যদি কোনও অভিযোগ থেকে থাকে, দলে গিয়ে বলুন।’’

শনিবারই বিধানসভাভিত্তিক ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচির সূচনা হয়েছে। যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক নেই সেখানে স্থানীয় নেতাদের কর্মসূচি পালনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্র, তৃণমূল বিধায়ক আছেন ১৩জন। তমলুক, হলদিয়া এবং পূর্ব পাঁশকুড়ায় শাসকদলের বিধায়ক নেই। তমলুকে কর্মসূচি পালনের দ্বায়িত্ব পেয়েছেন শহর তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ মহাপাত্র, পূর্ব পাঁশকুড়ায় দলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার জেলার এই দুই বিধানসভায় এই কর্মসূচি হয়েছে। তবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু আধিকারী কর্মসূচি করেননি। আর হলদিয়া বিধানসভা এই কর্মসূচি পালনের দ্বায়িত্ব জন্য এখনও কাউকে দেওয়া হয়নি। আর শনিবারের বদলে রবিবার ময়না বিধানসভায় কর্মসূচি করেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সংগ্রাম দোলাই।

হলদিয়া বিধানসভার মধ্যে রয়েছে হলদিয়া পুরসভা ও সুতাহাটা ব্লক এলাকা। গত বিধানসভা ভোটে হলদিয়া কেন্দ্রে হেরে যাওয়া প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল এখন তৃণমূলের হলদিয়া শহর সভাপতি। সুতাহাটা ব্লক সভাপতির পদে রয়েছেন অমিয় দাস। তবে কাউকেই এখনও হলদিয়ায় ‘গর্ব’ প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এই কর্মসূচির জেলা কো-অর্ডিনেটর ভগবানপুরের বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি মানছেন, ‘‘এটা ঠিক হলদিয়া বিধানসভায় এখনও কর্মসূচি পালন হয়নি। তবে শীঘ্রই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন