স্বস্তিতে: ললিতা রায় সরকার
চোদ্দো দিন অনশনের শেষ জয় পেয়েছেন ছেলে ও তাঁর বন্ধুরা। মা-ও যেন সেই জয়ের শরিক।
হবে না-ই বা কেন, দশ দিন ধরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ছেলে দেবাশিস বর্মনের পাশে ঠায় থেকেছেন মা ললিতা রায় সরকার। স্বামী অমলেশবাবুকে সঙ্গে নিয়ে এই ক’দিন তিনি এক দিকে যেমন উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করেছেন, তেমনই আবার আন্দোলনের শেষে ‘জয়’ পেয়ে এখন উচ্ছ্বসিত।
মঙ্গলবারই কোচবিহারে ফেরার ট্রেনে চেপেছেন ললিতা। সেখান থেকে বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলনের জয় একটা বড় নাড়া দিয়ে গেল। গোটা রাজ্য তো বটেই, গোটা দেশকে। আমার খুব ভাল লাগছে যে, ওদের শরিক হতে পেরেছি।’’
কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম গীতালদহের ললিতাদেবী তাঁর ছেলের পাশে দশ দিন কাটিয়ে ঘরে ফিরছেন। তবে ট্রেনে চাপলেও তাঁর মন পড়ে রয়েছে কলেজে পড়ুয়াদের পাশেই। ঘন ঘন ফোন করে খবর নিচ্ছেন ছেলের কাছ থেকে। বলছিলেন, “ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যেই করেন। এই জয়ে আমার সেটাই মনে হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা নজির তৈরি হল, যা হওয়া দরকার ছিল।” ছেলের কাছে থেকেই জানতে পারেন পড়ুয়ারা বিজয় মিছিল বার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি না করেছিলাম। কী দরকার বিজয় মিছিলের! কিন্তু শুনলাম, অন্যান্য কলেজ থেকে হাজার হাজার ছাত্র যোগ দিয়েছেন। আসলে জয়ের তো একটা আনন্দ থাকেই। আমি না করলে শুনবে কেন!”
অনশনের চার দিনের মাথায় কলকাতায় যান ললিতা ও অমলেশ। তাঁর পর থেকে সেই অনশন মঞ্চের পাশেই বসেছিলেন। পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী ললিতাদেবী। অমলেশবাবুর ছোট ব্যবসা রয়েছে। তাঁদের সামনেই দেবাশিস অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাতেও ললিতা ভেঙে পড়েননি। বলছিলেন, “ওই কয়েক দিন খুব কষ্ট হয়েছিল ছেলে ও তার বন্ধুদের জন্য। তবুও ভরসা ছিল, জয় আসবেই।” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই হস্টেল সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। যাদের গাফিলতি ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায়ও শুরু হয়েছে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ললিতা বলেন, “ছেলে এখন সুস্থ। সবাই ভাল আছে। আমরা বাড়ি ফিরছি।”