পাসপোর্ট কেড়ে পুলিশই চাইল টাকা, অভিযোগ

বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়িতে আসা দুই যুবককে রাস্তা থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের খালপাড়া ফাঁড়ির ঘটনা। ওই বৌদ্ধ পর্যটকদের দাবি, বিষয়টি জানার পরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি, আইসি পদমর্যাদার অফিসাররা দ্রুত ওই তাঁদের ছাড়ার নির্দেশও দেন। তার পরেও ফাঁড়ির কর্তব্যরত এক এএসআই শ্যামল দত্তরায় ওই যুবকদের এক জনের পাসপোর্ট কেড়ে কাগজে সই করিয়ে নেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫১
Share:

বৈধ পাসপোর্ট, ভিসা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে শিলিগুড়িতে আসা দুই যুবককে রাস্তা থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ উঠল। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের খালপাড়া ফাঁড়ির ঘটনা। ওই বৌদ্ধ পর্যটকদের দাবি, বিষয়টি জানার পরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি, আইসি পদমর্যাদার অফিসাররা দ্রুত ওই তাঁদের ছাড়ার নির্দেশও দেন। তার পরেও ফাঁড়ির কর্তব্যরত এক এএসআই শ্যামল দত্তরায় ওই যুবকদের এক জনের পাসপোর্ট কেড়ে কাগজে সই করিয়ে নেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে হয়রানি সহ্য করার পরে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা হস্তক্ষেপ করলে ওই পর্যটকেরা ছাড়া পান। রাতেই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement

ওই পর্যটকদের তরফেও পুলিশ-পর্যটন দফতর তো বটেই, কলকাতায় বাংলাদেশ হাই কমিশনেও বিশদে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ভুক্তভোগী দুই পর্যটকের অভিযোগ, ‘‘শিলিগুড়ির অধিকাংশ পুলিশ অফিসার পর্যটক-বান্ধব হলেও একাংশ যে ভাবে পাসপোর্ট আটকে টাকা আদায়ের ষড়যন্ত্র করেন, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তা না হলে শীর্ষ কর্তারা বলার পরেও কেন পাসপোর্ট আটকে এক জন উকিলের নাম করে আমাদের আটকে রাখা হবে?’’ তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা তো শুনলাম টাকা না দিলে পাসপোর্ট মিলবে না। একটা কাগজে সই করতে বাধ্য করা হল।’’

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পর্যটন ও বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ও দেশের পর্যটকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ জনপ্রিয় গন্তব্য। কিন্তু
অনেক সময় নানা হেনস্থার শিকার হয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হয় তাঁদের। উত্তরবঙ্গে এই অভিযোগ বেশি। মেনন বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয়।’’ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্ক হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Advertisement

পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, ওই দুই পর্যটকের এক জন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, অন্য জন আমদানি-রফতানির ব্যবসায় যুক্ত। দু’জনেরই বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন তাঁরা। গত ২৬ মে তাঁরা দার্জিলিঙে পৌঁছন। সেখানে দু’দিন ঘোরার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁরা শিলিগুড়ি পৌঁছে প্রধাননগরের একটি হোটেলে ওঠেন। তার পরে রিকশার চালককেই বলেন খাবারের হোটেলে নিয়ে যেতে। রিকশাচালক তাঁদের খালপাড়ার রেলগেটের পাশে বিবেকানন্দ রোডে দাঁড় করিয়ে সেখানে হোটেল রয়েছে বলে জানান। পর্যটকদের দাবি, তাঁরা ওই রাস্তার ধারেই একটি পুলিশ ভ্যান সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কর্তব্যরত অফিসার পর্যটকদের পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দিলেও তাঁদের পুলিশের গাড়িতে উঠতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার পর্যটককে পুলিশ টেনেহিঁচড়ে ভ্যানে তোলে বলে অভিযোগ। অন্য জন কলকাতায় পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের ফোেন বিপদের কথা জানানোর চেষ্টা করেন। শিলিগুড়িতেও এক পরিচিত ব্যক্তিকে ফোন করে সাহায্য চান। সেই সময়ে তাঁকে ফোন করতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এর পরে ইঞ্জিনিয়ার যুবকটিকে ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ওই এএসআই তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে এসিপি, সিআই সহ শীর্ষ কর্তারা ফাঁড়িতে ফোন করেন। পর্যটকেরা জানতে পারেন, পুলিশের ওই কর্তারা বিষয়টি জানার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ারই নির্দেশ দেন। কিন্তু, পর্যটকের অভিযোগ, ওই এএসআই বারেবারেই জানান, এক আইনজীবী আসলে ফয়সলা হবে। বড় কর্তারা কড়া ব্যবস্থার বার্তা দেওয়ায় পর্যটকেরা পাসপোর্ট ফেরত পান। এএসআই শ্যামলবাবুর দাবি, ‘‘টাকা চাওয়ার ব্যাপার নেই। পাসপোর্টটা দেখতে নিয়েছিলাম। তখন বাইরে কাজ পড়ায় সেটা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। অন্য উদ্দেশ্য ছিল না।’’

কিন্তু একজন ভিন দেশি পর্যটকের পাসপোর্ট বিনা কারণে কেন কেড়ে নিয়ে কাগজে সই করানো হল? এক উকিলকে ডাকার কথাই বা কেন বলা হল? এই প্রসঙ্গে এএসআই-এর দাবি, ‘‘এটা পুরোপুরি ঠিক নয়।’’

তবে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদেশি পর্যটকদের খালপাড়া এলাকায় হেনস্থার অভিযোগ আগেও শোনা গিয়েছে। পর্যটন দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল অগ্রবাল বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন