Dengue

চাপ বাড়াচ্ছে রাজ্যই, সরব চিকিৎসকেরা

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম, ডক্টর্স ফর পেশেন্টের মতো সাতটি চিকিৎসক সংগঠন এ দিনের সম্মেলনে ছিল। আইএমএ-র দক্ষিণ কলকাতা শাখার সভাপতি রামদয়াল দুবেও আগাগোড়া ছিলেন। তবে রাজ্য আইএমএ নেতৃত্ব কিংবা তৃণমূলের চিকিৎসক নেতাদের কেউ ছিলেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:১৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্য সরকার ডেঙ্গি তথ্য চেপে রাখতে যে ভাবে চাপ দিচ্ছে তাতে রোগীদের কাছে যথাযথ চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলে সোমবার সরব হলেন চিকিৎসকদের একাংশ। ডেঙ্গি পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণ করা গেল না তা নিয়ে রীতিমতো সম্মেলন ডেকে নিজেদের মত জানাতে
গিয়ে সরকারের উপরেই দায় চাপিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম, ডক্টর্স ফর পেশেন্টের মতো সাতটি চিকিৎসক সংগঠন এ দিনের সম্মেলনে ছিল। আইএমএ-র দক্ষিণ কলকাতা শাখার সভাপতি রামদয়াল দুবেও আগাগোড়া ছিলেন। তবে রাজ্য আইএমএ নেতৃত্ব কিংবা তৃণমূলের চিকিৎসক নেতাদের কেউ ছিলেন না।

এদিনের সম্মেলনে যে সব বিষয়গুলি উঠে এসেছে সেগুলি হল,

Advertisement

(ক) বছরভর যে সব ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যেত সেগুলি করা হয়নি বলেই রোগ জাঁকিয়ে বসেছে।

(খ) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে রোগ ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

(গ) ডেঙ্গি নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের ঘটনায় চিকিৎসকদের কাজের অধিকার খর্ব হচ্ছে।

(ঘ) সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে কোনও রোগী ভর্তি হলে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর রক্তের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট অনেক দেরিতে আসছে।

(ঙ) ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রেসক্রিপশন এবং রিপোর্টে কোথায় কী লিখতে হবে সেটাও চিকিৎসকদের নির্দেশ দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা।

‘ডক্টর্স ফর ডেমোক্র্যাসি’-র সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও রোগ সরকার ছড়ায় না। কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে সেটা সরকারের ব্যর্থতাও নয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতটা উন্নতির পরেও যদি কোনও জ্বরকে ‘অজানা’ বলতে হয়, তা হলে সেটা সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যর্থতা।’’

চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মশা নিধনের আদর্শ সময়। কিন্তু ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনভিবিডিসিপি) নির্দেশ মেনে এ রাজ্যে সেই সময় মশা নিধনের কাজ চলে কি না প্রশাসনিক স্তরে তার কোনও নজরদারি হয় না। প্রশাসন উদ্যোগী না হলে এই ধরনের সংক্রামক রোগ নির্মূল অসম্ভব বলেই ডাক্তারদের মত। সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের তরফে সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রথম থেকে কড়া পদক্ষেপ না নিলে এই ধরনের সমস্যা আরও বাড়ে। এনভিবিডিসিপি-র নির্দেশ মেনে বছরভর কাজ চালালে এমন পরিস্থিতি হতো না।’’

অপর্যাপ্ত সরকারি পরিকাঠামো অথচ লাগামছা়ড়া প্রতিশ্রুতি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও ভেঙে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ চিকিৎসদের। যার প্রভাব পড়ছে চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্কে। এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের মানস গুমটা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যক্ষেত্রে
সরকারের দূর্বলতা চিকিৎসকদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঢাকার চেষ্টা চলছে। ডেঙ্গির মোকাবিলাতেও সেই একই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রোগী-চিকিৎসকের সম্পর্কের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’

এদিন প্রায় একই সময়ে নবান্নে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে সরকারি স্তরে পরিকাঠামোর অভাবের কথা মানতেই চাননি মুখ্যমন্ত্রী। উল্টে এক
শ্রেণির চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে তাঁর কথায় হুমকির সুর ছিল, এমনটাই মনে করছেন সভায় উপস্থিত চিকিৎসকদের একাংশ।

আইএমএ-র রাজ্য শাখার নেতৃত্বের সবাই তৃণমূলের নেতা। তাই কি তাঁরা সম্মেলনে যাননি? তৃণমূল কাউন্সিলর তথা আইএমএ-র রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘আইএমএ সরকারপন্থী কিংবা বিরোধী কোনওটাই হতে চায় না। চিকিৎসক সমাজের পাশে থেকে রোগীদের সেবার কাজ করতে চায়। তাই যাইনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের কাছে আমার আহ্বান, তাঁরা মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement