লক্ষ্মণ পরামানিকের শোকার্ত পরিবার। শুক্রবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির পাথরডি গ্রামে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
মাসখানেক আগে কংগ্রেস ছাড়াতেই হামলা হল—আক্ষেপ করছে লক্ষ্মণ পরামানিকের (৫৭) পরিবার। বৃহস্পতিবার, ভোটের ফল বেরনোর রাতে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির পাথরডি গ্রামে ধারালো অস্ত্রের কোপে খুন করা হয় প্রৌঢ়কে। আপাত কারণ— বাড়ির পাশেই শব্দবাজি ফাটিয়ে উল্লাস করায় ব্যস্ত কিছু কংগ্রেস কর্মীকে একটু দূরে সরে যেতে বলা। তার পরেই হামলা হয়। তাতে লক্ষ্মণবাবুর প্রাণ যায়, তাঁর পরিবারের পাঁচ এবং দুই পড়শি মিলিয়ে সাত জন জখম হন। তবে পরিবারের ধারণা, ওই খুনের পিছনে রয়েছে কংগ্রেসের রাজনৈতিক আক্রোশ। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করছে তৃণমূল।’’
পুরুলিয়া জেলায় ১১টি বিধানসভার মধ্যে ন’টিতে জিতেছে তৃণমূল। জোটের পকেটে এসেছে পুরুলিয়া এবং বাঘমুণ্ডি। বাঘমুণ্ডি থেকে ফের জিতেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। তা হলে আক্রোশ কীসের? বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে চোট পেয়ে পুরুলিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লক্ষ্ণণবাবুর ছেলে রথু পরামানিক। মাথায় ও মুখে জড়ানো ব্যান্ডেজ, গেঞ্জি রক্তে ভেজা। তাঁর দাবি, লক্ষ্ণণবাবু দীর্ঘদিনের কংগ্রেস সমর্থক। মাসখানেক আগে গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটা, সভায় যাওয়া শুরু করেন লক্ষ্মণবাবু। তাতেই চটে যান এলাকার কংগ্রেস নেতারা।
রথুর অভিযোগ, ‘‘ভোটে জেতার আনন্দে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে কংগ্রেসের কিছু লোক বাজি ফাটাচ্ছিল। বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে বলে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ বাবা ওদের শুধু দূরে গিয়ে বাজি ফাটাতে বলেন। তর্কাতর্কি করে ওরা তখনকার মতো চলে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এসে হামলা চালায়।’’
নিহতের ভ্রাতৃবধূ রুক্মিনী পরামাণিকও হামলায় জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর দাবি, আততায়ীদের এক জনের হাতে ভোজালি দেখে ‘কী করছ, কী করছ’ বলে এগিয়ে যেতেই বেমক্কা ধাক্কা মেরে তাঁকে ফেলে দেয় সে। রুক্মিনীদেবীর অভিযোগ, ‘‘লোকটা দাদার বুকে ভোজালি বসিয়ে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠতে তেড়ে এসে এলোপাথাড়ি ভোজালি চালায়। তাতে আমি, রথু আর অন্যদের চোট লাগে।’’ ঘটনায় কংগ্রেসের বুথ সভাপতি নাজিম খান এবং স্থানীয় তিন কংগ্রেস কর্মী— ঠাকুরদাস মুড়া, গণপতি মুড়া ও বরুণ সিং মুড়ার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে পরামানিক পরিবার। পুলিশ বরুণকে ধরেছে। পুরুলিয়া আদালতের বিচারক তাকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠান। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ
কুমার বলেন, ‘‘বাকি তিন জনের খোঁজ চলছে।’’
পাথরডি গ্রামে ঢোকার মুখেই শুক্রবার দেখা গেল, পুলিশ টহল দিচ্ছে। লক্ষ্ণণবাবুর বাড়িতে তাঁর আশি বছরের বৃদ্ধা মা সুভদ্রা পরামানিক এক বার এর মুখে চাইছেন, এক বার ওর মুখে। তবে বৃদ্ধাকে ছেলের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বামেদের ভোট মেলালে বাঘমুণ্ডিতে আমরা প্রায় ৫১ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলাম। এ বার জোট করে লড়েও বাঘমুণ্ডিতে কংগ্রেস প্রার্থী আট হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছেন। লক্ষ্ণণবাবুকে খুন কংগ্রেস কর্মীদের সে হতাশারই বহিঃপ্রকাশ।’’ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নেপাল মাহাতো। বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয় না। তবে খবর পেয়েছি, স্থানীয় গোলমালই এর পিছনে রয়েছে।’’